রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে ভুয়া বিল-ভাউচারে কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তিন নারীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চলছে তদন্ত। তবে এখনও কোনো মামলা করেনি কর্তৃপক্ষ। তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার পর মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, দুই নারীর একজন চট্টগ্রাম নগরের সীমান্ত ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্টে খুলেন এবং পরে সেখানেই ওই চেকটি নগদায়ন করেন।
পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চললেও এখনও পর্যন্ত কোহিনূর আক্তার নামে এক নারী ও অস্থায়ী অফিস সহায়ক হাবিবের নাম জানা গেছে।
এর আগে আরএ-১১৩৯০৮৫ নম্বরের আরেক চেক দিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি বিল আগ্রাবাদের সীমান্ত ব্যাংক থেকে নগদায়ন করা হয়। বিলটি উত্তোলন করেন সোহাগ আলী নামের এক ব্যক্তি। এই বিলটি নগদায়ন করার জন্য ওই ব্রাঞ্চে কসমোপলিটনের নামের একটি নতুন অ্যাকাউন্টও খোলা হয়। যেটিতে শুধুমাত্র ওই পঞ্চম চেকটি নগদায়ন করা হয়।
এ ঘটনার পর বিষয়টি জানাজানি হলে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রেল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক বরাবরে ওই পঞ্চম চেকটি ফেরত চেয়ে চিঠি ইস্যু করে। তবে ওই সোহাগ আলী নামের ব্যক্তিকে চেনেন না বলে জানান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নাবিল আহসান। একইসঙ্গে তিনি সীমান্ত ব্যাংকে কোনো অ্যাকাউন্ট খোলেননি বলেও জানান।
এছাড়া ১১ ফেব্রুয়ারি অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা কার্যালয়ের (পূর্ব) হিসাব কর্মকর্তা মামুন হোসেন, হিসাবরক্ষক শিমুল বেগম, অডিটর (ডিএফএ) পবন কুমার পালিত, হিসাব কর্মকর্তা (প্রশাসন) মো. আবু নাছের, হিসাবরক্ষক (প্রশাসন ও সংস্থাপন) সৈয়দ সাইফুর রহমান, জুনিয়র অডিটর ইকবাল মো. রেজাউল করিম এবং অফিস সহায়ক মাকসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
জানা গেছে, এই ঘটনার ‘নাটের গুরু’ হাবিব নামের ওই অস্থায়ী অফিস সহায়ক। তবে তার সঙ্গে কোহিনূর আক্তার নামের এক নারীসহ আরও তিনজনকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। গত বছরের নভেম্বরে কোহিনূর নামের ওই নারী আগ্রাবাদের সীমান্ত ব্যাংকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কসমোপলিটনের নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেই অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের ওই ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার চেক সোহাগ আলী নগদায়ন করেন।
কোহিনূর আক্তার কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁওয়ের তেলিয়াপাড়ার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
এদিকে এ ঘটনার পর হাবিব কয়েকদিন গা-ঢাকা দেন। তবে বর্তমানে তিনি আবারও কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করছেন। কিন্তু তিনি কোনো স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী নন। কাজ নাই, মজুরি নাই—প্রকল্পে তিনি হিসাব অধিকর্তার দপ্তরে কাজ করছেন।
জানা গেছে, হাবিব অফিস সহায়ক হলেও তার কম্পিউটার চালনায় দক্ষতা থাকায় তাকে দিয়ে হিসাব শাখার কাজ করানো হয়। সে সুবাদে তার কাছে আইবাস প্লাস প্লাসের আইডি ও পাসওয়ার্ড ছিল। কর্মস্থলে তিনি সাবেক অর্থ ও হিসাব অধিকর্তা (পূর্ব) এবং বর্তমান কন্ট্রোল জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ) কামরুন নাহারের ভাগিনা বলে পরিচয় দিতেন, যেটি ছিল ভুয়া।
হাবিব চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানা মুরাদনগরের পাঠানবাড়ির নবী হোসেনের ছেলে। তারা দুই বোন ও দুই ভাই। তাদের মা এক সময় সিজিডিএফ কামরুন নাহারের বাড়িতে থাকতেন। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেকে কামরুন নাহারের ভাগিনা হিসেবে পরিচয় দিতেন হাবিব।
হাবিবকে অনেকে আবার আরমান নামেও চেনেন। তার আরেক ভাই ওবায়দুল কাদের ওরফে ওবায়দুল্লায় সুমন (৩৮); তার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অর্ধ ডজন মামলা। ২০২৩ সালে ১০ অক্টোবর মঞ্জুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, হিসাব শাখার অস্থায়ী অফিস সহায়ক হাবিব ও কোহিনূর আক্তার ছাড়াও আরও দুই নারী এবং এক পুরুষের নামে তদন্ত চলছে।
টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি কেন, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা কার্যালয়ের (পূর্ব) প্রথম অধিকর্তা রফিকুল বারী বলেন, ‘তদন্ত শেষে মামলা করা হবে’।
হাবিবের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে সিজিডিএফ কামরুন নাহার বলেন, ‘সে (হাবিব) আমার ভাগিনা না। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, না জেনে ভুল তথ্য দিয়ে বিব্রতকর অবস্থা ফেলবেন না।’
জেএস/ডিজে