চট্টগ্রাম রেলের এক ঠিকাদারের কমিশন বাণিজ্য থেমে নেই সাজার পরও
পাঁচ মাসের সাজা থেকে বাঁচতে ১১ বছর ‘পলাতক’
চেক প্রতারণা মামলায় সাজা হওয়ার পরও থেমে নেই রেলওয়ের এক ঠিকাদারের কমিশন বাণিজ্য। বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছ থেকে দুই পার্সেন্ট কমিশন নিয়ে বিলের টাকা এনে দেন তিনি। তার এই কাজে চট্টগ্রাম রেলের অর্থ ও হিসাব শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে।
কমিশন না দিলে বিলের টাকা আটকে থাকে দীর্ঘদিন, সেজন্য ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেয়ার্স অ্যান্ড এক্সেসরিজ সাপ্লাইয়ার্স এসোসিয়েশনে’ অভিযোগ করার সাহস পান না ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা। সংগঠনের পক্ষ জানায়, তার কমিশন বাণিজ্যের বিষয়ে শুনেছে। তবে সাজার বিষয়টি সত্যি হলে সদস্যপদ বাতিল করা হবে।
কমিশনখেকো ওই ঠিকাদার হলেন মিজানুর রহমান কাজল (৬০)। তিনি হালিশহর এলাকার মধ্য রামপুরের হাফেজ বাড়ির ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। ‘মেসার্স এনটিএস বিজনেস সলিউশন চট্টগ্রাম’ নামে তার একটি সাপ্লাইয়ার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালে এক ব্যবসায়ী করা চেক প্রতারণা মামলায় পাঁচ মাসের সাজা হয় কাজলের।
সাজা থেকে বাঁচতে ১১ বছর ‘পলাতক’
কাজলের পাঁচ মাসের সাজা হলেও তাকে ১১ বছর গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ তিনি প্রায় প্রতিদিনই রেলওয়ে কার্যালয় এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন বলে জানান রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে।
এর পর চলতি বছরের ২৬ মার্চ কাজলকে গ্রেপ্তার করে হালিশহর থানা পুলিশ। কিন্তু গ্রেপ্তার করার পরদিনই জরিমানার চার লাখ টাকার মধ্যে দুই লাখ টাকা আদালতে জমা দিয়ে জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি।
আদালতসূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে আ ন ম গোলাম মোস্তফা (৬৭) নামের এক ব্যক্তি বাদি হয়ে মিজানুর রহমান কাজলের বিরুদ্ধে চার লাখ টাকার চেক প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলায় আদালত ২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর তাকে পাঁচ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন এবং চার লাখ টাকা জরিমানা করেন।
কমিশন বাণিজ্য ও সাজার বিষয়ে জানতে মিজানুর রহমান কাজলকে ফোন করা হলে এক মহিলা কল রিসিভ করেন। এরপর কাজল আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন। এর ১০ মিনিট পর অন্য একটি নম্বর থেকে কল দেন কাজল। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে ফোন কেন করা হয়েছে জানতে চান এবং প্রতিবেদকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন আবার কল কেটে দেন।
কাজলের দুই পার্সেন্ট কমিশন নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেয়ার্স অ্যান্ড এক্সেসরিজ সাপ্লায়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘কাজলের দুই পার্সেন্ট কমিশন নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এ কারণেই সে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা হয়।’
কাজলের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেন বলেন, ‘তার সাজার বিষয়টি যদি সত্যি হয়, তাহলে কমিটির মিটিংয়ে তার সদস্যপদ বাতিলের সুপারিশ করা হবে।’
এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেয়ার্স অ্যান্ড এক্সেসরিজ সাপ্লায়ার্স এসোসিয়েশনের গত কমিটির এক সদস্য বলেন, কাজল দুই পার্সেন্ট করে কমিশন নেন ঠিকাদারদের কাছ থেকে। তাকে টাকা দিলে দ্রুত বিলের টাকা পান ঠিকাদাররা।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেয়ার্স অ্যান্ড এক্সেসরিজ সাপ্লায়ার্স এসোসিয়েশনের এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কাজলকে ২ পার্সেন্ট কমিশন দিয়ে দ্রুত বিলের টাকা পেয়েছি আমি।’
ডিজে