চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৩০ শিক্ষার্থী বহিষ্কার প্রশ্নে আলোচনার সুযোগ রয়েছে, ইঙ্গিত অধ্যক্ষের

উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলেই আরও কঠোর ব্যবস্থা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় বহিষ্কার হওয়া ৩০ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ নিয়ে এখনও ‘আলোচনার সুযোগ’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শাহেনা আক্তার। তবে পাশাপাশি তিনি সতর্ক করে দিলেন এই বলে— শিক্ষার্থীরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে চমেক প্রশাসন আরও কঠোর হবে।

হানাহানিতে জড়িয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে বহিষ্কার হওয়া ৩০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী তাদেরকে দেওয়া শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবে কিনা— চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এমন প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. শাহেনা আক্তার।

অধ্যক্ষ বলেন, ‘আপিলের সুযোগ পাবে কিনা সেটা সময়সাপেক্ষে বলা যাবে। একদম পাবে নাও বলা যাবে না। তবে বিশৃঙ্খলা করলে যে আরও কঠোর হব সেটা কালকের (মঙ্গলবার) সিদ্ধান্তেই বলা আছে।’

পাশাপাশি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে ছাত্রলীগ নেতাদের এমন অভিযোগও নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।

এর আগে বহিষ্কার হওয়া ৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ। চমেক ছাত্রলীগের এই অংশটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। যদিও শুরু থেকেই শিক্ষা উপমন্ত্রী চমেকে তার ‘কোনো গ্রুপ নেই’ বলে দাবি করে আসছেন।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতারা চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শাহেনা আক্তারের বিরুদ্ধে শিবিরকে ‘পৃষ্ঠপোষকতা’ দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নবগঠিত ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ (ইচিপ) এর সভাপতি ডা. কেএম তানভীর।

বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের নিজের আজ্ঞাবহ জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের উপস্থিত রেখে অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করার ঔদ্ধত্য দেখিয়ে শিবির নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে অবস্থান মসৃণ করে দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন।’

তবে জামায়াতের কোন্ কোন্ শিক্ষক অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এমন প্রশ্নের জবাবে তানভীর বলেন, ‘আমরা সভায় উপস্থিতির লিস্ট হাতে পাইনি। আপনাকে এই বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানাবো।’

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) চমেক অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সাম্প্রতিক সংঘর্ষের জড়িত থাকায় ৩০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার এবং আরও চারজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

চমেক ছাত্রলীগে বিবাদমান দুটি পক্ষ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ২৩ জনই নওফেলের অনুসারী বলে একপক্ষের নেতাকর্মীদের দাবি।

সংবাদ সম্মেলনে নবগঠিত ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের (ইচিপ) সভাপতি ডা. কেএম তানভীর বলেন, ‘৩০ অক্টোবর সকালে মেধাবী শিক্ষার্থী মাহাদি আকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে একদল ছাত্রনামধারী সন্ত্রাসী বর্বরোচিত হামলা চালায়। এতে আকিব গুরুতর আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিল।­’

তিনি দাবি করেন, ‘আকিবের ওপর হামলাকারী ছিল ১৬ জন। অথচ মাত্র সাতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা গেছে এবেং এ ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।’

তানভীর বলেন, ‘আকিবের ওপর হামলার ঘটনার তদন্তের কথা বলে গঠিত কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তার বাইরে গিয়ে বিগত দুই বছরের ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। ২৩ জন নিরীহ শিক্ষার্থীকে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কার করা হয়। যারা ঘটনার সাথে জড়িত নন, এমনকি তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগও দেওয়া হয়নি।’

তবে তানভীরের এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘যে ৩০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে এর মধ্যে ৬ জনকে রাতে ছাত্রাবাসের গেইট ভেঙে ভেতরে অবস্থান নেওয়া অবস্থায় পেয়েছি আমি ও কলেজের সিনিয়র শিক্ষকরা সবাই। সেই ৬ জন বাদে বাকি সকলকেই আমরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছি। চিঠি দিয়েছি। কেউ কেউ আত্মপক্ষ সমর্থন করেছে। অনেকে চিঠির জবাব দেয়নি। শুনেছি তারা এটাকে পাত্তাও দেয়নি। বলেছে এসব তদন্ত-আত্মপক্ষ সমর্থন সবই আইওয়াশ।’

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের মঙ্গলবারের সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে তানভীর বলেন, ‘যেহেতু ইন্টার্ন ডাক্তারদের বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাই পরিচালক মহোদয়কে অবশ্যই রাখা উচিত ছিল। কারণ ইন্টার্ন ডাক্তারদের কর্তৃপক্ষ তিনি। উনার অনুপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধ্যক্ষের দুরভিসন্ধি প্রমাণিত হয়।’

বিএমএর এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘দুদকের তদন্তে কোণঠাসা হয়ে পড়া এক ঠিকাদার চিকিৎসক নিজের ঠিকাদারি ও সরবরাহ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে চাইছেন। ঠিকাদার নেতা ও দুই ছায়াসঙ্গী শিক্ষকের প্ররোচনায় অধ্যক্ষ অন্তঃসারশূন্য বহিষ্কারাদেশ নাটক মঞ্চস্থ করেছেন মাত্র।’

বুধবার নওফেল অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতাদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডা. শাশ্বত মজুমদার আকাশ, ডা. মো সাকী, কনক দেবনাথ, ফয়েজ উল্লাহ, হোজাইফা কবির পিয়াল, জামিল উদ্দিন খান, শাওন দত্ত, মো. সাইফ উল্লাহ ও মুনান খান।

চমেক ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই পক্ষ গত প্রায় তিন বছর ধরে বিভিন্ন সময় বিরোধে জড়িয়েছে। চলতি বছরের ৩ মার্চ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষার পরিবেশ ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সভা-সমাবেশ ও মিছিল-স্লোগান নিষিদ্ধ করে।

চলতি বছর ১৫ আগস্টের প্রাক্কালে আগের দিন ১৪ আগস্ট আরেকটি আদেশে সেসময় প্রফেশনাল পরীক্ষার জন্য ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের জাতীয় দিবস বা অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছিল চমেক কর্তৃপক্ষ।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!