চট্টগ্রাম মেডিকেলে বিরল ভাইরাসের রোগী বাড়ছে হঠাৎ করেই
মেনিঙ্গো-এনসেফালাইটিসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কে
৪ দিন ধরে ছিল জ্বর। শনিবার সকালে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান লোকটি। শুরু হয় খিঁচুনি। অজ্ঞান অবস্থাতেই শরীর মোচড়াতে থাকেন অদ্ভূত ভঙ্গিতে।
এমন সব বিচিত্র উপসর্গের রোগীরা এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছেন। প্রতি মাসেই এরকম রোগী ৩ থেকে ৪ জন পাওয়া যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগের নাম মেনিঙ্গো-এনসেফালাইটিস।
শনিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রাঙ্গুনিয়ার পদুয়ার মো. সোহেল এ রোগ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন।
সোহেলের ভাই কামাল জানান, সোহেল কৃষি কাজ করতো। চারদিন আগে কাজ থেকে দুপুরে ফেরার পর বিকেলের পর থেকে তার ভাইয়ের গায়ে জ্বর আসে। স্থানীয় ডাক্তারের কাছ থেকে কিনে নাপা খাওয়াচ্ছিলেন। কিন্তু ৪ দিন পর তার ভাইয়ের শরীরে খিঁচুনি আসে। অজ্ঞান হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৬ নং ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ইমরান জানান, মেনিঙ্গো-এনসেফালাইটিস রোগটি একটি ভাইরাস। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার পর ব্রেনে ইনফেকশন ঘটায়। রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। রোগীর শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়। রোগী দুমড়াতে-মুচড়াতে থাকে।
চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ রোগের ওষুধ মূলত আন্টিবায়োটিক চিকিৎসা। প্রতি মাসে এরকম রোগী ৩ থেকে ৪ জন পাওয়া যায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে।
ডা. ইমরান বলেন, মেনিনগোএনসেফালাইটিসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে অস্বাভাবিক আচরণ, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন এবং চিন্তাভাবনার সমস্যা।
লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে, মাথাব্যথা, জ্বর, ঘাড় নড়াচড়ায় ব্যথা, হালকা সংবেদনশীলতা এবং খিঁচুনি।
চিকিৎসাবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল ঘেঁটে জানা যায়, মানুষের মস্তিষ্কের চার পাশ মেনিন নামে একটি পর্দার মাধ্যমে ঢাকা থাকে। বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ও মেনিন পর্দাকে আক্রমণ করলে পর্দাটি ফুলে যায়। এই অসুখকে মেনিনজাইটিস বলা হয়। মেনিনজাইটিস পর্দাটি ফেটে গিয়ে সংক্রমণ যখন মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে বলা হয় মেনিঙ্গো এনসেফেলাইটিস।
সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে রোগীর প্রবল জ্বর হয়। ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। সংক্রমণ হলে প্রবল খিঁচুনি, বমি ভাব, মাথা ব্যথা হয়। ক্রমশ মস্তিষ্ক ফুলে উঠে প্যারালাইসিস হয়ে যায়। রোগী চোখ খুলতে পারেন না। মুখে বেঁকে যায়। ভুল বকতে থাকেন। লোক চিনতে পারেন না। রোগী ক্রমশ কোমায় চলে যান। একটি একটি করে অঙ্গ বিকল হয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের রোগী, ডায়বেটিক এবং নেশাসক্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি।
রোগীর মেরুদণ্ড থেকে সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড (মস্তিষ্ক রস) সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
আইএমই/সিপি