চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে লিফটে ওঠা নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে রিয়াজুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজনকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে কর্মচারী ও ডাক্তারের বিরুদ্ধে। এ সময় রিয়াজুলের স্ত্রী বাধা দিলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। মারধর করার পর উল্টো ভুক্তভোগীকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
এদিকে ভুক্তভোগীর স্ত্রী থানায় গিয়ে চিকিৎসক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। কর্মচারী ও চিকিৎসকরা মিলে রিয়াজুলকে দফায় দফায় মারধর করেছে বলে অভিযোগ স্ত্রী আয়েশা বেগমের।
রোববার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের ছয় নম্বর লিফটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রিয়াজুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি নোয়াখালী জেলার চাটখিলের কড়িহাটি এলাকার মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে।
রিয়াজুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, তাঁর ননদ তাহমিনা আক্তার ষষ্ঠ তলায় ভর্তি ছিলেন। তাঁকে দেখতে স্বামী রিয়াজুল ইসলামকে নিয়ে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ওঠেন। তাঁদের সঙ্গে চার বছর বয়সী এক সন্তানও ছিল। সিঁড়িতে কাজ চলায় দ্বিতীয় তলায় লিফটের বোতাম চাপ দেন। লিফটে তাঁরা উঠতে চাইলে, লিফটের কর্মচারী জানান, এটি চিকিৎসকদের লিফট। ওঠা যাবে না। অথচ ওইখানে অনেক সাধারণ মানুষ ছিলেন। এই বিষয়ে রিয়াজুল ইসলাম প্রশ্ন করলে, লিফটম্যান খুবই বাজে কথা বলেন।
আয়েশা বেগম বলেন, ‘লিফটম্যান বাজে কথা বলার পর রিয়াজুল শুধু বলেন, আপনি কাজটি ভালো করেননি। লিফটে পাবলিক ঢুকাইছেন অথচ বলছেন চিকিৎসকের লিফট। (এ কথা বলার) সঙ্গে সঙ্গে টি শার্ট পড়া একজন রিয়াজুলের শার্টের কলার ধরে লিফটে ঢুকিয়ে ফেলেন। সঙ্গে লিফটম্যান তাঁর ঘাড়ে ও পিঠে মারধর করতে থাকেন। এ সময় তিনি ও তাঁর সন্তান বিষয়টি দেখে চিৎকার করতে থাকেন। এরপর মার খেলেও রিয়াজুলকে বুঝিয়ে শান্ত করি আমি।’
এরপর দ্বিতীয় তলায় রোগীর আত্মীয়কে ফোন করেন আয়েশা। ওই সময় ১৫-২০ জন একসঙ্গে রিয়াজুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যান। চারতলায় ৩২৬ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফা মারধর করেন। ওই রুমটি ছিল একজন চিকিৎসকের। সেখানে প্রচুর মারধর করতে দেখে সামনে গেলে আয়েশাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তাঁরা। এমনকি চড়-থাপ্পড়ও দেন বলে জানান আয়েশা।
আয়েশা বেগম আরও বলেন, ‘আমার জামাও ছিঁড়ে ফেলেন তাঁরা। সঙ্গে আমার সন্তানও ছিল। সেও আঘাত পেয়েছে। আমার স্বামীকে ওই রুমে মারধর করেন অনেক চিকিৎসকও। পরে আমরা জানতে পেরেছি, লিফটে টি শার্ট পরা ব্যক্তিটি একজন চিকিৎসক। মারধর করার পর আমার স্বামীকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। থানায় গিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ বলেছে, ‘‘তাঁরা অনেক প্রভাবশালী, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেওয়া যাবে না।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, ‘তারা যে লিফটে উঠতে চেয়েছেন, ওই লিফট ছিল কর্মচারীদের। রিয়াজুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তিকে লিফটে না উঠতে বললে, লিফটে থাকা কর্মচারী ও একজন সহযোগী অধ্যাপকের গায়ে হাত তোলেন। পরে কর্মচারীরা তাঁকে আটকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।’
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালের লিফটে এক চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর স্বজনের হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় রিয়াজুল ইসলাম নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে চমেক প্রশাসন।’
আরএম/ডিজে