সাধারণ থেকে গুরুতর— করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সব রোগীর স্বজনই এখন ছুটছেন আইসিইউ বা ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের খোঁজে। একটি আইসিইউ শয্যার জন্য তদবির, টাকা— কোনো কিছুকেই তারা বাধা মনে করছেন না। কিন্তু চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ শয্যার সংখ্যাই ১৬২— যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শয্যায় ভর্তি রয়েছেন ভিন্ন রোগে আক্রান্ত গুরুতর রোগীরা।
তবে সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে আইসিইউর জন্য এতো হাহাকার, সেই আইসিইউতে গিয়ে বেশিরভাগ রোগীই আর জীবিত ফিরে আসছে না। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বা ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে করোনা আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ২৭৬ জন। এর মধ্যে ২০৮ জনই মারা গেছেন ওইদিন পর্যন্ত।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেড জোনে বেশিরভাগ রোগীই ভর্তি হতে আসছেন, যখন তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮০-এর নিচে নেমে গেছে। করোনা রেড জোনের দুই ইউনিটে এরকম রোগীদের ১৫ থেকে ২০ লিটার অক্সিজেন লাগছে। কিন্তু এর মধ্যে যাদের অবস্থা আরও বেশি খারাপ হচ্ছে, তাদের দরকার পড়ছে আইসিইউর। দরকার পড়ছে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার— যেখানে রোগীর অবস্থার ধরন অনুযায়ী ২০ লিটার থেকে শুরু করে ২৫ লিটার থেকে এমনকি ৪০ লিটার অক্সিজেনও দিতে হচ্ছে। কিন্তু সেটা সবসময় চমেক হাসপাতালে করোনারোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউতে মেলানো যাচ্ছে না।
চমেক হাসপাতালে করোনা উপসর্গের রোগীদের ‘ইয়েলো জোন’ এবং করোনা পজিটিভ রোগীদের ‘রেডজোনের’ দুই ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনারোগীদের জন্য হাসপাতালটিতে আইসিইউর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১০টি। এর মধ্যে দুটি এইচডিইউ বা হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট।
জানা গেছে, কোভিড আইসিইউর পুরোটাই দেখভাল করছেন রেড জোন ইউনিট-২ এর নার্স ইনচার্জ শফিকুল নূর। অভিযোগে রয়েছে, অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের দায়িত্ব ভাগ করা থাকলেও তারা করোনারোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউতে তেমন একটা যান না। এ কারণে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহারের যাবতীয় সিদ্ধান্ত শফিকুল নূরই দিয়ে থাকেন। এছাড়াও বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা ও পরিচর্যা যথাযথভাবে হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে করোনা আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত ২৭৬ জন ভর্তি হলেও এর মধ্যে ২০৮ জনই মারা গেছেন।
করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত আইসিইউ থেকে বেশিরভাগ রোগীই কেন ফিরছে না— এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ জয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত আইসিইউতে বৃদ্ধ বয়সের গুরুতর রোগীদেরই নেওয়া হচ্ছে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সেট করে অক্সিজেন দিয়েও তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশনের উন্নতি হচ্ছে না। ফলে রোগী মারা যাচ্ছে।’
তবে করোনা আইসিইউর নার্স ইনচার্জ শফিকুল নূর মেশিন অপারেটিংয়ে দক্ষ বলে জানিয়ে ডাক্তারদের রাউন্ড ডিউটি যথাযথভাবে হচ্ছে বলে জানান অনিরুদ্ধ ঘোষ জয়।
সিপি