চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আটকে আছে মান্ধাতা-জমানায়, পদে পদে ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের

মার্কশিট তোলা থেকে ফর্ম পূরণ সবই আমলাতান্ত্রিক নিয়মে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিষ্ঠার অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পার করলেও এখনও সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সেকেলে অ্যানালগ পদ্ধতিতে। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ছেন বিশ্ববদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য সময়ে ভোগান্তির পরিমাণ কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও করোনার এই সময়ে ভোগান্তির পরিমাণ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যদি ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় হতো, তাহলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই সব সম্পন্ন করতে পারতেন। প্রশাসনের একটু আন্তরিকতা থাকলে সবই বদলানো সম্ভব।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বর্ষ শেষে আরেক বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবার নতুন করে অনেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অন্তত তিন থেকে চারটা অফিস প্রধানের স্বাক্ষর লাগে। এসব স্বাক্ষর নিতে শিক্ষার্থীদের এক অফিস থেকে অন্য অফিসে ঘুরতে হয় সশরীরেই। যার জন্য শিক্ষার্থীদের অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। একইভাবে হারিয়ে যাওয়া মার্কশিট উত্তোলন, সনদপত্র উত্তোলন, রেজিস্ট্রেশন কার্ড উত্তোলন, প্রশংসাপত্র উত্তোলন, এপিয়ার্ড সার্টিফিকেট উত্তোলন, পরীক্ষার ফর্ম পূরণসহ শিক্ষার্থীদের প্রায় সবকিছুই এই প্রক্রিয়ায় করতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাহিমা প্রিয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডিজিটাল যুগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অ্যানালগ সিস্টেমে হওয়ায় আমাদের প্রচুর ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একটা সামান্য ভর্তির কাজের জন্য তিন থেকে চারটা অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। অথচ এই প্রক্রিয়া যদি অনলাইনে করার সুযোগ থাকতো, তাহলে কয়েক মিনিটেই করে ফেলা যেত।’

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘ভর্তির তারিখ ঘোষণার পর থেকে বারবার লকডাউন। এর ফলে ভর্তির কাজগুলো আমি সঠিক সময়ে করতে পারিনি। একজন মেয়ে হয়ে শুধু ভর্তির জন্য ঢাকা থেকে এসে ডিপার্টমেন্ট, হল, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে দৌড়াদৌড়ি করাটা খুব কষ্টসাধ্য। তাই ভর্তির কার্যক্রম যদি অনলাইনে হত তাহলে আমার মত অনেকেই উপকৃত হত।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কী এক অদ্ভুত নিয়ম! করোনার মধ্যে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকলেও ভর্তি হতে হবে সশরীরে এসেই। আমি আবাসিক শিক্ষার্থী। এক সপ্তাহ ধরে বিভাগের অফিস, আবাসিক হলের অফিস, প্রশাসনিক ভবন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে হবে। করোনার এই ভয়াবহ সময়ে ভর্তি হতে এসে কোথায় থাকবো তা বুঝতে পারছি না। এসব প্রক্রিয়া যদি অনলাইনে শেষ করা যেত তাহলে আমাদের খুব উপকার হতো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘একটা কাজে হঠাৎ করে আমার সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। সার্টিফিকেট উত্তোলন প্রক্রিয়া ডিজিটাল না হওয়ায় প্রথমে ঢাকা থেকে এসে আমাকে আবেদন করতে হয়েছে। এরপর ১৫ দিন পর এসে আবার এই সার্টিফিকেট আমাকে নিয়ে যেতে হয়েছে। অথচ ডিজিটাল প্রক্রিয়া চালু থাকলে একবার এসেই আমি সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে পারতাম।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আবু আদনান বলেন, ‘আমার চারটা প্রফেশনাল পরীক্ষার মার্কশিটের নামে চার রকমের ভুল এসেছে। এটা সংশোধন করতে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত এক সপ্তাহ যেতে হয়েছে। ডিজিটাল যুগে এটা এক ধরনের হয়রানির মতো।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সব প্রক্রিয়া অনলাইনের আওতায় আনতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমে আমরা পেমেন্টের প্রক্রিয়াটা অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসবো। কিছুদিনের মধ্যে এটার কাজ শুরু করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী। এরপর ধাপে ধাপে বাকিগুলোর কাজও শুরু করবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, ‘আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে অটোমেশনের বিষয়টি রেখেছি। ইউজিসিতে অটোমেশনের জন্য একটা প্রজেক্ট দেওয়া আছে। সেটা পাশ হলে হয়ে যাবে।’

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!