চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ দিনে জ্বলেপুড়ে ছাই ৫ পাহাড়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পাহাড় কাটার পর এবার চলছে পাহাড় পোড়ানোর মহোৎসব। প্রায় প্রতিদিনই পোড়ানো হচ্ছে ক্যাম্পাসের কোনো না কোনো পাহাড়। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের। তবে একের পর এক পাহাড় পোড়ানো হলেও প্রশাসন তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শুধুমাত্র আগুন নিভিয়ে দায় সারছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি পাহাড়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিপুল পরিমাণ গাছপালা পুড়ে গেছে। সর্বশেষ শনিবার (২১ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝরনার পাশের পাহাড়ে আগুন দেখা যায়।

এর আগে গত ১৭ মার্চ বিকেলে বঙ্গবন্ধু হলের পাশে একটি পাহাড়ে আগুন লাগে। এ সময় পাহাড় থেকে ধাওয়া করে ৪ জনকে আটক করে প্রক্টরিয়াল বডি। তারা সকলেই পাবনার বাসিন্দা বলে জানা যায়। পরে তাদের প্রক্টর অফিসে এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর থানায় পাঠানো হয়।

এর আগে ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের মধ্যবর্তী পাহাড়ে আগুন দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর পরের দিনও আরেকটি পাহাড়ে আগুন লাগে।

এর আগে ১১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হলের পেছনের পাহাড়ে আগুন দেখা যায়।

কেন পাহাড়ে বার বার আগুন?
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পাহাড়ে একের পর এক আগুন লাগার জন্য সংশ্লিষ্টরা জুম চাষ ও গাছ কাটার পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, পাহাড়ে আগুন দেওয়ার ফলে নিচের ছোট গাছগুলো পুড়ে যায়। কিন্তু বড় গাছ এত কম আগুনে পোড়ে না। তবে আগুনের তাপে গাছের পাতা পুড়ে যায়। পাতা ঝরে গাছ মরে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন কাঠুরিয়া কিংবা বনখেকোদের জন্য গাছগুলো কাটতে সুবিধা হয়। তাই তারা এভাবে পাহাড়ে আগুন দিচ্ছে।

এছাড়া পাহাড়ের কোলে জুম চাষ করার জন্য স্থানীয়রা পাহাড়ে আগুন দেয় বলেও জানা গেছে।

হুমকির মুখে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য
এদিকে একের পর এক পাহাড়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। নির্বিচারে পাহাড় পোড়ানো ও গাছ কাটার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতির ওপর। পাহাড়ে আগুন দেওয়ার ফলে বণ্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে অভয়ারণ্য। যে স্থানে বন্যপ্রাণীরা নিরাপদে চষে বেড়াতো, সেখানে আগুন লাগা কিংবা জনমানুষের আনাগোণায় অনিরাপদ হয়ে পড়েছে প্রাণীদের আবাসস্থল।

নিশ্চুপ প্রশাসন
গত ১০ দিনে বিভিন্ন পাহাড়ে অন্তত ৫ বার আগুন লাগলেও প্রশাসন তা বন্ধ করতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বারবার আগুন লাগার কারণ খুঁজতে বা কোনো চক্র আগুন লাগাচ্ছে তা বের করতে কোন তদন্ত কমিটি গঠন না করে শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিস ডেকে আগুন নিভিয়েই দায় সেরেছে তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ দিনে জ্বলেপুড়ে ছাই ৫ পাহাড় 1

এ বিষয়ে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন সরকার বলেন, ‘তীব্র দাবদাহে শুষ্ক মৌসুমে অনেক সময় প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ে আগুন লাগে। কিন্তু চবির পাহাড়ে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে বেশ কয়েকবার আগুন লাগাটা স্বাভাবিক আগুন মনে হচ্ছে না। এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় পাহাড়ের গাছ কাটা সিন্ডিকেট উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ আগুন লাগাচ্ছে এবং তারা বেশ তৎপরভাবে এই জঘন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বিপুল পরিমাণ বনজ সম্পদ এই গোষ্ঠী চুরি করবে এটা নিশ্চিত।’

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ে যারা আগুন দিচ্ছে তারা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। তারা অমানুষ। বণ্যপ্রাণীর বিচরণ ভূমিকে মরুভূমি করাই তাদের উদ্দেশ্য। পাহাড় পোড়ানোতে প্রাণীর খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হচ্ছে, মারা যাচ্ছে পাহাড়কে আঁকড়ে ধরে থাকা দেশের কিছু বিপন্ন ও সংকটাপন্ন প্রাণী। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হারাচ্ছে প্রাণীবৈচিত্র্যের গৌরব। দ্রুত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

জানতে চাইলে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. ফরিদ আহসান বলেন, ‘পাহাড়ে আগুন লাগার কারণে ঝোঁপঝাড়গুলো পুড়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে বন্যপ্রাণীরা তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসএম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পাহাড়ে কয়েকটা কারণে আগুন লাগতে পারে। যারা কাঠুরিয়া বা ক্ষেত-খামারে কাজ করে তাদের সিগারেটের ফেলে দেওয়া অংশ থেকে আগুন লাগতে পারে। অথবা পাহাড়ে চাষাবাদ করার জন্য কেউ আগুন লাগাতে পারে। এছাড়া অন্য কারণও থাকতে পারে। তবে আমরা নির্দিষ্ট করে কোনো কারণ এখনও বলতে পারবো না। আমরা এটা বের করার জন্য কাজ করছি।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!