চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সহসা বসছে না পিসিআর ল্যাব, আটকা অর্ধলাখ আমিরাতপ্রবাসী

করোনাভাইরাসের র‍্যাপিড পিসিআর টেস্টের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে চট্টগ্রামে প্রায় অর্ধ লক্ষ আরব আমিরাত প্রবাসী আটকা পড়লেও সহসা এই টেস্টের জন্য মেশিন বসছে না চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে। শুরুতে শুধু ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই র‍্যাপিড পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে আমিরাত প্রবাসীদের জন্য।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফ্লাইট চালু হলেও করোনাভাইরাসের র‍্যাপিড পিসিআর টেস্ট সার্টিফিকেট না থাকায় যেতে পারছেন না প্রবাসীরা। এই জটিলতায় দুবাই যেতে পারছেন না চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষ আমিরাত প্রবাসী। এ সংখ্যা সারা দেশে লাখের ওপরে। ফ্লাইট চালুর পরও আমিরাতে প্রবেশ করতে না পারায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন প্রবাসীরা। বিমানবন্দরে ল্যাব বসানোর দাবিতে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনসহ একাধিকবার মানববন্ধনও করেছেন তারা।

সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামে এ তিনটি বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব চালুর সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রি পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেছেন, প্রথমে ঢাকার হযরত শাহ্জালাল বিমানবন্দরে চালু হবে র‍্যাপিড পিসিআর ল্যাব। এরপর চালু হবে অন্য দুটি বিমানবন্দরে।

বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে ল্যাব বসানো হলে সবার জন্য সুবিধা হবে। কমবে যাত্রী ভোগান্তি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন শর্ত মতে, ফ্লাইটের ৬ ঘন্টার মধ্যে বিমানবন্দর থেকে র‍্যাপিড পিসিআর টেস্ট করে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট প্রাপ্তদেরই কেবল তাদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। এ কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে র‍্যাপিড পিসিআর টেষ্টের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন আরব আমিরাত প্রবাসীরা। কিন্তু সেটি বসাতে ব্যাপক গড়িমসির কারণে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীরা।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তার্জাতিক বিমানবন্দরে ম্যানেজার উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সাথে আলোচনা চলছে দ্রুত র‍্যাপিড পিসিআর মেশিন বিমানবন্দরে বসানোর জন্য। কিন্তু আগে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো হবে। এরপর বিবেচনায় আসবে চট্টগ্রাম। কবে নাগাদ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের র‍্যাপিড পিসিআর ল্যাব বসে সেটি জানানো যাচ্ছে না। কারণ এ ল্যাব বসাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৪ এপ্রিল থেকে ভারত সঙ্গে ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা দেয় সংযুক্ত আমিরাত সরকার। এরপর ১৩ মে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকা থেকে যাওয়া ফ্লাইটের ওপর। পরে ৪ আগষ্ট বাংলাদেশসহ ছয় দেশের যাত্রীদের ট্রানজিট সুবিধা চালু করে ইউএই। তবে বাংলাদেশ থেকে কেউ সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারবেন না।

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে পৃথক পৃথক তালিকা করে বিভিন্ন শর্ত ও নির্দেশনা দিয়েছে আরব আমিরাত। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, আফিগানিস্তান. শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, নেপালকে একটি তালিকায় রেখেছে আরব আমিরাত। এদেশগুলোর জন্য নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে ফ্লাইট ছাড়ার ৬ ঘন্টার মধ্যে র‍্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্টপ্রাপ্ত যাত্রীরা আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে তারা আরব আমিরাতে প্রবেশ করার পর আবার দ্বিতীয় দফা করোনা টেস্ট করা হবে।

এদিকে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে র‍্যাপিড পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছে আরব আমিরাত প্রবাসীরা। এ দাবি জানিয়ে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে মানববন্ধন করেছেন তারা।

আরব আমিরাত প্রবাসী প্রকৌশলী এসএম মহিউদ্দিন বেলাল রনি বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় ৫০ হাজার দুবাই প্রবাসী আটকা পড়েছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, অনেকের হওয়ার পথে। শুধুমাত্র দুবাই সরকার ভিসার মেয়াদ বাড়ালেও, অন্য প্রদেশগুলো ভিসার মেয়াদ বাড়ায়নি। ফলে অনেক প্রবাসীদের ফিরে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা সরকারের কাছে একটি দাবি জানাচ্ছি, যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরে সরকারিভাবে ল্যাব স্থাপন করা হয়।

প্রবাসী কাজী মোহাম্মদ লোকমান বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে র‍্যাপিড টেস্ট ল্যাব স্থাপন করে আটকে পড়া প্রবাসীদের সংযুক্ত আরব আমিরাত ফিরে যাবার ব্যবস্থা করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সরকারের উচিত প্রবাসীদের এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা।

আরব আমিরাত প্রবাসী মোহাম্মদ আলী বলেন, রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের কল্যাণে কেউই এগিয়ে আসে না। অথচ দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের। আমরা সংবাদ সম্মেলন থেকে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেবো।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, আরব আমিরাত প্রবাসীদের সমস্যা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য আমরাও উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে র‍্যাপিড পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!