চট্টগ্রাম বন্দরে সেই ১০৮ বিলাসী গাড়ি আবার নিলামে উঠবে ১৯ জুন

পর্যটকদের কারনেট সুবিধায় আনা বিলাসবহুল পুরনো ১০৮টি গাড়ি আবারও নিলামে তুলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। আগামী ২৯ মে ক্যাটালগ কিনে ১২ থেকে ১৩ জুন জমা দেওয়া যাবে। কেনার আগে গাড়িগুলো বন্দরের ভেতর গিয়ে সরেজমিনে দেখার সুযোগও দিচ্ছে কাস্টমস। এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ জুন।

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের এই গাড়িগুলো ১০ বছর ধরে পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিলাম শেডে। এ পর্যন্ত নিলামে উঠেছে অন্তত নয়বার, কিন্তু গাড়ি বিক্রি হয়েছে মাত্র তিনটি। এবারও নানা জটিলতায় বিক্রি হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি না হওয়ার প্রধান দুটি কারণ ছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কমার্শিয়াল পারমিট বা সিপি না পাওয়া এবং রিজার্ভ ভ্যালু বা সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ। এর মধ্যে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে সবগুলো গাড়ির সিপি আগেভাগেই অনুমোদন এনেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ফলে বড় ধরনের জটিলতা থেকে রেহাই পেল কাস্টমস। এখন সংরক্ষিত মূল্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করলেই গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি নিশ্চিত হবে।

তবে আর্থিক ক্ষতি এড়াতে বাজার কিংবা ভিত্তিমূল্যের পরিবর্তে বিডারের দেওয়া দরেই গাড়িগুলো বিক্রির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।

নির্ধারিত মূল্যের ৬০ শতাংশ না পাওয়ায় বেশির ভাগ গাড়িই শেষ পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হয় না। এবারও এর পুনরাবৃত্তি হবে কি না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, ‘সংরক্ষিত মূল্য আগেভাগেই ক্যাটালগে জানানো হবে। ফলে সব কিছু যাচাই করে দেখেই ক্রেতারা গাড়ির মূল্য দেবে। আমরা চাই এবার সর্বোচ্চ ক্রেতার অংশগ্রহণ, যাতে এই নিলামপ্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ এবং যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক হয়। ’ আর এতে প্রতিটি গাড়িরই ভালো দর মিলবে—যোগ করেন কাস্টমস কমিশনার।

চট্টগ্রাম কাস্টমস বলছে, পর্যটন সুবিধায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশ থেকে আসার সময় এসব গাড়ি ‘কারনেট দ্য প্যাসেজ’ সুবিধায় আনতেন। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়ার সময় আর ফেরত না নিয়ে দেশেই গাড়িগুলো অবৈধভাবে বিক্রি করে দিতেন। আর কারনেট সুবিধায় আনা গাড়ির অপব্যবহার রোধে কাস্টমসের কড়াকড়ি আরোপের পর থেকেই এসব গাড়ি বন্দর থেকে খালাস নেওয়া বন্ধ করেন বিদেশি পর্যটক বা প্রবাসীরা। ২০১১ সালের পর থেকেই মূলত গাড়িগুলো বন্দর শেডে পড়ে আছে। আর সবগুলো গাড়িই বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের এবং দামি। যদিও সেসব গাড়ি দীর্ঘদিন কনটেইনারের ভেতর এবং বাইরে পড়ে থাকার কারণে কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে।

এতে অন্তত কয়েক শ’কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে। পাশাপাশি বন্দরের মূল্যবান জায়গাও দখল করে রেখেছে গাড়িগুলো।

এ অবস্থায় আগামী ১৯ জুন পুনরায় গাড়িগুলো নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। ২৯ মে গাড়িগুলোর ক্যাটালগ প্রকাশ করা হবে। ১ জুন নিলাম সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গাড়ি গুলো বন্দরে পরিদর্শন করে দেখার জন্য সময় রাখা হয়েছে ৫ থেকে ৯ জুন।

এছাড়া বিডাররা ১২ জুন ও ১৩ জুন দুইদিন দরপত্র জমা দিতে পারবেন। পে-অর্ডারের হার্ডকপি জমাদানের তারিখ রাখা হয়েছে ১৬ জুন।

দরপত্র খোলার তারিখ ১৯ জুন। সর্বোচ্চ দরদাতাদের গাড়িগুলো অনুমোদনের সম্ভাব্য তারিখ রাখা হয়েছে ২৩ জুন।

কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার আল আমিন বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে সিপি অনুমোদন সাপেক্ষে ১০৮টি গাড়ির নিলাম হচ্ছে। আশাকরি এবার সর্বোচ্চ দরদাতা পাওয়া যাবে। আগে উপযুক্ত দর না পাওয়ায় বিডারদের গাড়িগুলো বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

এবারে নিলামে তুলতে যাওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে ২৬টি মিত্সুবিশি, ২৫টি মার্সিডিস বেঞ্জ, ২৫টি বিএমডাব্লিউ, সাতটি ল্যান্ড রোভার, সাতটি ল্যান্ড ক্রুজার, ছয়টি লেক্সাস, পাঁচটি ফোর্ড, তিনটি জাগুয়ার, একটি দাইয়ু, একটি হোন্ডা ও একটি সিআরভি অন্যতম। এসব গাড়ির মধ্যে বেশির ভাগই ১০ বছরের পুরনো; কিন্তু চার বছরের বেশি পুরনো গাড়ি দেশে আমদানি নিষিদ্ধ। তাই এসব গাড়ি নিলামে তুললেও বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেওয়া সম্ভব হতো না। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদন বা সিপি নিয়েই এসব গাড়ি বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেওয়া সম্ভব হবে। ২০২১ সালের নভেম্বরে সর্বশেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।

এএস/এমএফও/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!