চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার পথে ‘সিলেটি সাঈদের’ অসংখ্যবার গার্মেন্টস পণ্য চুরি

নিজের নামে রয়েছে অসংখ্য বাড়ি, গাড়ি। রয়েছে অনেক ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান,বিশাল বাড়ি। এই সব কিছুর মালিক মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদ। তিনি এসব কিছু গড়েছেন গার্মেন্টস পণ্য চুরির অর্থে। তার পরিকল্পনায় ও যোগসাজশে একটি-দুটি নয়, বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য চুরি করেছে। চোরাই গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি করে স্ত্রী সন্তানদের লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামের গার্মেন্টসের ১৭ হাজার ১৫২ পিস তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার পথে চুরি হয়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা হয়। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা এবং কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে পরিচালনা করে গার্মেন্টস পণ্য চুরি সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদসহ সাত জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের একটি টিম।

গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- রাজ্জাক, ইউসুফ, মাইনুল, আলামিন, দুলাল হোসেন ও খায়রুল। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে চার হাজার ৭০৫ পিস তৈরি পোশাকসহ দুটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বিশ্বে লিডিং রপ্তানিকারক বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ঘিরে চোর চক্রের কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংঘটিত চুরির ঘটনায় চোরাই মালামাল ও দুটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার এবং গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্রের মূলহোতাসহ সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

তিনি বলেন, গেল ১১ মে জয়ন্তি নিট ওয়্যার লিমিটেড তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০ পিস পণ্য শিপমেন্ট করতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছার পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম। এজন্য বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়। ওই ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে ইমরান মোবারক ও ইব্রাহিম নামে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

অন্যদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামক গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক ১৪৩১ কার্টুনে মোট ১৭ হাজার ১৫২ পিস বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। মালামাল শিপমেন্টের সময় গণনারা সময় ৫ হাজার পিস মাল কম পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়।

তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকা মহানগরের উত্তরা এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ রাজ্জাক, ইউসুফ, খায়রুল ও মাইনুলকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যমতে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার নিমসার এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ আল-আমিন ও দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিলেটি সাঈদের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলা রয়েছে। চট্টগ্রামে তিনি ছয়টি মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। চোর চক্রের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন সময় চার থেকে পাঁচ হাজার চুরির ঘটনায় হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য।

হাফিজ আক্তার বলেন, সিলেটি সাঈদের স্ত্রী সন্তানসহ লন্ডনে বসবাস করেন। তার মালিকানাধীন বিশাল অট্টালিকা, প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ ভ্যান রয়েছে। এসব যানবাহন তিনি ভাড়ায় ব্যবহার করতেন গার্মেন্টস পণ্য শিপমেন্টের কাজে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!