দেবী শেঠীর হাসপাতাল ৯ বছরেও হল না চট্টগ্রাম বন্দরে

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার প্রায় নয় বছর পরও হয়ে উঠেনি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের হাসপাতাল। প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠীর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সামাজিক কাজ হিসেবে এই হাসপাতালটি করার উদ্যোগ নিয়েছিল চবক। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে হাসপাতালটি নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল।

হাসপাতালটি নির্মাণের উদ্যোগের সাথে জড়িত ছিলেন চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের সাংসদ মইন উদ্দিন খান বাদল। হাসপাতালটি নির্মাণ হলে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ চট্টগ্রামবাসী এমনকি বিদেশীরাও ভালো মানের চিকিৎসাসেবা পেতেন বলে আশা করা হচ্ছিল।

জানা যায়, প্রায় নয় বছর আগে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হাসপাতাল নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছিল চবক। তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ২০১০ সালের ১৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ভারত সফরকালে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ২০১০ সালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ভারতের নারায়ণা গুরুদয়ালায়া গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। হাসপাতালটি হবে এক হাজার শয্যার। এ ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এর আগে ২০১০ সালের ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বৈঠকে যৌথ উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে একই বছরের ১ জুন নৌ-পরিবহন সচিবের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিনিয়োগ বোর্ড, অর্থ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি পর্যালোচনা করেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, হাসপাতালটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা এবং ভারতের নারায়ণা গুরুদয়ালায়া গ্রুপ ১৫০ কোটি টাকা বহন করার কথা ছিল। হাসপাতালটি চট্টগ্রামে প্রায় ২৩ একর জমির ওপর নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। নারায়ণা গুরুদয়ালায়া গ্রুপ মূলত হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম, পরামর্শক সেবা ও কন্টিনজেন্সি (আকস্মিকভাবে প্রয়োজন পড়া) খরচ বহন করার কথা ছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ (সিবিএ) এর যুগ্ম সচিব আবদুস সাদেক নান্না চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাসপাতালটি নির্মাণ হলে অবশ্যই ভালো হতো। এলাকার মানুষ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতো। বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় ভালো মানের কোন হাসপাতাল নেই। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের হাসপাতালটি হলে সবাই উপকৃত হতো। হাসপাতালটি হওয়া উচিত ছিল।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দরের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ‘সামাজিক কাজ হিসেবে এই হাসপাতালটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছির বন্দর। কিন্তু বন্দরের কাজ তো আর হাসপাতাল তৈরি করা নয়। তাই কোন এক অজানা কারণে হাসপাতাল আর হয়ে উঠেনি। এটি হলে চট্টগ্রামবাসীসহ দেশে আসা বিদেশীরাও উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পেতেন।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোশারফ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিনের সময়ে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। পরে আর কী কারণে হাসপাতালটি হয়ে উঠেনি, তা আমি বলতে পারবো না।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুসারের হাসপাতালটি নির্মাণ হয়নি। অর্ডিন্যান্স অনুসারে প্রাইভেট হাসপাতাল নির্মাণ বন্দরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই সরকারি অনুমোদন না পাওয়ায় হাসপাতালটি নির্মিত হয়নি।’

হাসপাতালের ভাগ্য নিয়ে তিন বছর আগের বাহাস
তিন বছর আগে, ২০১৬ সালের ৭ মে বন্দরের উপদেষ্টা কমিটির সভায় বিশেষায়িত এই হাসপাতাল নিয়ে তর্কে লিপ্ত হন সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল এবং পটিয়ার সংসদ সদস্য ও হুইপ শামসুল হক চৌধুরী।

সভায় নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্দেশে মাঈনুুদ্দিন খান বাদল বলেন, গত সরকারের সময়ে ২০১০ সালে বন্দরে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য ভারতের বিখ্যাত চিকিৎসক দেবী শেঠীর সাথে বন্দর চেয়ারম্যানের একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই সময় বর্তমান নৌমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। এখন সেই হাসপাতালের খবর কী?

এ বিষয়ে নৌ মন্ত্রী কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী বলেন, এগুলো এখন আর নেই, সব বাদ।

শামসুল হকের কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে যান মাঈনুদ্দিন খান বাদল। তিনি বলেন, আপনি কি আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি? আপনি কথা বলার কে? মাননীয় মন্ত্রী, উনি কি সভাপতি? আমি মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছি মন্ত্রী জবাব দেবেন। সভার শুরুতে আপনি আরো একবার বাধা দিয়েছেন।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!