চট্টগ্রাম বন্দরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে জীর্ণ ৩ কন্টেইনার, যেকোন মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা!

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ড ও রেস্টুরেন্টের পাশেই তিনটি কন্টেইনার পড়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে এসব কন্টেইনার পড়ে থাকায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। এ তিনটি কন্টেইনারে কি থাকতে পারে এটি নিয়ে বন্দরে আসা-যাওয়া লোকদের মধ্যে চলছে আলোচনা। অনেকেই মনে করছেন দীর্ঘদিন ধরে কনটেইনারগুলো পড়ে থাকার ফলে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জানা গেছে, কন্টেইনারগুলো দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে ভেতরের মালমাল নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া তিনটি কনটেইনারই প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। চার্লিতে যে কন্টেইনার রাখা হয়েছে সেটিতে বেশ বড়সড় বটগাছ গজিয়েছে। কন্টেইনারটির দরজার লক ও সাইটের স্টিল খুলে গিয়ে বের হচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্য। সেটি যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সিএন্ডএফ প্রতিনিধি মকবুল হোসেন বলেন, কন্টেইনারের পাশেই রেস্টুরেন্ট আছে। যেখানে বন্দর ব্যবহারকারী শত শত কর্মজীবী মানুষ প্রতিনিয়তই (যেহেতু বন্দর ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে) এই কন্টেইনারের পাশ ও গলি দিয়ে যাতায়াত করছে। আল্লাহ না করুন উপরের কন্টেইনারটি যদি ধসে পড়ে তাহলে অনেক মানুষ মারা যাবে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কন্টেইনার দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মনির হোসেন নামের আরেক সিএন্ডএফ প্রতিনিধি বলেন, চুরি হওয়ার ভয়ে একটি কন্টেইনারের উপর আরেকটি কন্টেইনার রাখা হয়েছে। এভাবে ফেলে রাখা মোটেও উচিত হয়নি। এ তিনটি কন্টেইনারের উপরে বড় গাছ উঠে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ ড্যামেজ হয়ে গেছে কনটেইনার তিনটি।

মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন নামের একব্যক্তি বলেন, এ তিন কন্টেইনারে বিপজ্জনক পণ্য থাকতে পারে। যা থেকে প্রতিদিন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পঁচা গন্ধে ওই তিনটি কন্টেইনার পাশ দিয়ে হাঁটাও যায় না।

বন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারণ মোহাম্মদ শামীম বক্স চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বন্দরের বিপজ্জনক পণ্য থাকায় আমরা অনেক ভয়ে আছি। এসব পণ্যের কারণে যে কোন সময় লেবাননের বৈরুতের মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের পি-শেডে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ৫ টন রাসায়নিক পণ্য ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ। বিপজ্জনক মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের মধ্যে রয়েছে হাইড্রোক্লোরাইড, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, বিপজ্জনক কঠিন পদার্থ, বিপজ্জনক উপাদান, রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণের উপাদান।

আরও জানা যায়, প্রথমে এসব পণ্য নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করা হলেও পরে নিলামে তোলা থেকে সরে আসে কাস্টমস হাউস। শেষপর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ‘রাসায়নিক’ ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে ধ্বংসের কাজ বাস্তবায়ন করবে কাস্টমস— এমনই সিদ্ধান্তই হয়েছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, বন্দরের পি-শেডে বিপজ্জনক পণ্যের ৪৩টি লটসহ মোট ৪৯টি লট নিয়ে বিশেষ নিলামের আয়োজন হয় গত ৭ সেপ্টেম্বর। নিলাম আয়োজন করা ৪৯টি লটের ৪৩টিতেই রয়েছে বিভিন্ন বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য। অন্যদিকে পচনশীল ফলমূল রয়েছে ছয়টি লটে। ৪৩টি রাসায়নিক পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যই বন্দরের পি শেডের ড্রামে রাখা হয়েছে। সেখানে বিপজ্জনক এসব পণ্যের তালিকায় এমন কিছু পণ্য আছে, যেগুলো সেই ২০০০ সাল থেকেই শেডে পড়ে আছে। যদি এসব পণ্য বিস্ফোরিত হয়, তাহলে লেবাননের বৈরুতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে রসায়নবিদরা আশঙ্কা করছেন।

লেবাননের বৈরুতে বিস্ফোরণ হওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরেও কী পরিমাণ বিপজ্জনক পণ্য রয়েছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য গত ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি বন্দরের পি-শেডে ২৩ ধরনের পণ্যের মজুদ খোঁজে পায়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ওই তিনটি কনটেইনার মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে আছে। আমরা ধারণা করছি এই তিনটি কন্টেইনার ১০ বছর ধরে পড়ে রয়েছে। আমার জানামতে গুঁড়ো দুধ রয়েছে ওই তিন কন্টেইনারে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!