চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গা দখলে নিয়ে পার্কিং বাণিজ্য, মাসে আয় ১৩ লাখ
ছাত্রলীগ নেতাদের অবৈধ বাণিজ্যে পুলিশও জড়িত
চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর এলাকার তালতলা মাঠ, যেটি স্থানীয়রা ‘বাবা টার্মিনাল’ নামেই চেনেন। মূলত খেলার মাঠ হলেও এখানে রাত হলেই বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। তবে সেই মাঠটি দখলে নিয়ে অবৈধ গাড়ি পার্কিং বাণিজ্য করছে স্থানীয় একটি চক্র।
এই চক্রের নিয়ন্ত্রণে আছেন কথিত এক ছাত্রলীগ নেতা। দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন আরও দুজন। কাগজে-কলমে জায়গাটির প্রকৃত মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হলেও একটি এখন মাদকসেবী ও দখলদারদের হাতে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ গাড়ি এখানে পার্কিং করা হয়। আর এভাবে প্রতিমাসে গাড়ি পার্কিংয়ের নামে প্রায় ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্র।
বন্দর কর্মকর্তাদের দাবি, মাঠের অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয় নিয়মিত।
তবে অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের প্রশ্রয়েই এখানে অবৈধ পার্কিং ও মাদকসেবীদের আড্ডা হয়।
জানা গেছে, লিজ না নিয়েও এই মাঠের দখলদারিত্বের মাঠ পর্যায়ে তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন আরিফ নামের একজন যুবক। তিনি ওই পার্কিং এলাকার ‘ম্যানেজার’ হিসেবে পরিচিত। তার সঙ্গে রয়েছেন আরিফ নামের আরেক যুবক। পুরো নাম কাজী মো. আরিফ। তবে তিনি নিজেকে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন। যদিও নগর ছাত্রলীগের প্রকাশিত লিস্টে এমন কোনো নেতার নাম নেই।
এছাড়াও এই সিন্ডিকেটে আরও আছেন মনির ও জুয়েলের নামের দুই যুবক। মূলত এই চারজনের তত্ত্বাবধানেই চলছে অবৈধ পার্কিংয়ের রমরমা বাণিজ্য। কেন্দ্রীয় এক সাবেক যুবলীগ নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন কথিত ছাত্রলীগ নেতা আরিফ। মূলত এই ক্ষমতার দাপট দেখিয়েই পার্কিং বাণিজ্যের মূলহোতা হয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি এই মাঠে একটি ট্রাকের সঙ্গে দড়ি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে এক যুবক।
আরও জানা গেছে, প্রতিদিন দুই শিফটে এই মাঠে গাড়ি রাখা হয়। গাড়ি রাখা বাবদ গুনতে হয় ১৫০ টাকা। প্রতিদিন এখানে পার্কিং করা হয় প্রায় ৩০০ গাড়ি। সেই হিসেবে মাসে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। এভাবে বছরে কোটি টাকার ওপর অবৈধ পার্কিং থেকে আয় করছে এই চক্র। প্রতিদিন দিনেরবেলা মনির ও রাতে সুমনের তত্ত্বাবধানে চলে পার্কিং বাণিজ্য।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, গাড়ি পার্কিং এলাকায় মাদক ব্যবসা ও পতিতাবৃত্তি থেকেও বড় অংকের টাকা আয় করে থাকে এই চক্র।
পরিচয় গোপন করে কথা হয় ম্যানেজার আরিফের সঙ্গে। তিনটি কাভার্ডভ্যান রাখতে হলে কি করতে হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওখানে দিনে মনির ও রাতে সুমন দায়িত্বে থাকে। ওদেরকে ট্রাকপ্রতি ১৫০ টাকা করে দিলে কেউ ডিস্টার্ব করবে না। ওদেরকে আমার নাম বলবেন।’
একসঙ্গে তিনটি গাড়ি রাখার বিনিময়ে কিছু ডিসকাউন্ট চাইলে আরিফ বলেন, ‘ভাই এখানে ডিসকাউন্ট হয় না। ১৫০ করেই দিতে হবে।’
প্রতিদিনের চুক্তিতে না গিয়ে মাসিক কোনো চুক্তি আছে কি-না, জানতে চাইলে আরিফ বলেন, ‘না, মাসিক নেই, যা দেবেন ডেইলিরটা ডেইলি।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের এস্টেট কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা তো অভিযান চালাই। কিন্তু ওরা (দখলদার) পুলিশ ডেকে আনে।’
মাদকসেবীদের আস্তানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদকের বিষয়টা তো আর আমরা দেখি না। ওটা পুলিশ দেখে, পার্কিংয়ের বিষয়েও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে করে ওরা। আপনি এসব বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’
বন্দরের জায়গা কেন পুলিশ দখলমুক্ত করবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। আমরা কখনও অবৈধ দখলে উৎসাহিত করি না। পুলিশকে বলি উচ্ছেদ করতে, কিন্তু ঘুরে ফিরে আবারও জায়গা দখল করে বসে দখলদাররা।’
অবৈধ পার্কিং বাণিজ্যে পুলিশের সহযোগিতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাফুজুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এই বন্দর এলাকার ইস্ট কলোনির অপরপাশে পেট্রোল পাম্পের পেছনের তালতলা টার্মিনাল ও টিসিবি গেডাউনের পরিত্যক্ত মাঠেও রয়েছে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং। এখান থেকেও প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।
বিএস/ডিজে