চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ এর নাম ও ছবি ব্যবহার করে ব্যানার টাঙানোর ঘটনায় গভীর ক্ষোভ নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে দ্রুত ব্যানার অপসারণ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে এই দাবি জানান সিইউজের নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ।
চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে অবস্থিত চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু দুর্বৃত্ত। এর পর থেকে চট্টগ্রামের পেশাদার সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। গত ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের কাছেও স্মারকলিপি দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান।
এদিকে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে মূল বিষয়কে এড়িয়ে সাংবাদিকদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে খোদ প্রেসক্লাব ভবনেই ব্যানার টাঙানো অশালীন, অমানবিক ও ন্যায়বিচার পরিপন্থী।
এতে বলা হয়, অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের কাছে চট্টগ্রামের ৯৯ শতাংশ পেশাদার সাংবাদিকের স্বার্থে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বৃহৎ ও প্রাচীন সংগঠন ‘সিইউজে’র কার্যালয় তালামুক্ত করে স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিতের দাবিতে সংগঠনটি একটি স্মারকলিপি দেয়। সৌহার্দ্যপূর্ণ ফলপ্রসু আলোচনায় স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণে আশ্বাস দেন। এরপর থেকেই মহলবিশেষ সিইউজে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে নানা অপপ্রচার শুরু করে। স্মারকলিপি দেওয়ার দুদিনের মাথায় প্রথমে সিইউজে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি ও নাম উল্লেখ করে এবং পরবর্তীতে ব্যানার পাল্টে শুধুমাত্র সভাপতির নাম উল্লেখ করে পর পর দুটি আপত্তিকর ব্যানার সাঁটানো হয়। সাংবাদিকদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে এ রকম ব্যানার টাঙানোয় জড়িতরা অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ মনে করে। একই সাথে এ ধরনের ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সরকারের অঙ্গীকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সাংবাদিকদের সম্মান ও মর্যাদাকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের কালো দিনগুলোয় জাতি ফিরতে চায় না। প্রেস ক্লাবের মতো ভবনে সাংবাদিকদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ব্যনার টাঙানো মুক্ত সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের প্রতি হুমকি। কারা এ ধরনের বিদ্বেষপ্রসুত কাজ করছে এবং কেন করছে তা চট্টগ্রামের সচেতন সাংবাদিকরা অবগত। প্রশাসনসহ দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদগণের এ ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দেওয়া এই ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অরুচিকর ব্যনার দ্রুত অপসারণ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করেছেন সিইউজে নেতৃবৃন্দ, যাতে করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুত স্বাধীনতার যে পরিবেশ তৈরির জন্য প্রচেষ্টা তা আরও ফলপ্রসূ হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত এ বিষয়ে সুবিবেচনামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করে সিইউজে। গণমাধ্যম, সাংবাদিক এবং সাংবাদিকদের অধিকারের স্বার্থে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করে সিইউজে।
বিবৃতিদাতারা হলেন সিইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সম্পাদক স.ম ইব্রাহিম, সহ-সভাপতি ও দৈনিক কালবেলার চট্টগ্রামের ব্যুরো চীফ সাইদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক ও দৈনিক আজকের পত্রিকার সিনিয়র প্রতিবেদক ওমর ফারুক, অর্থ সম্পাদক ও বাংলানিউজ২৪.কমের সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট সোহেল সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ব্যুরো ইনচার্জ সুবল বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও বাংলানিউজ২৪.কমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মিনহাজুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য ও ডেইলি নিউজ টাইমসের ব্যুরো প্রধান আহসান হাবিবুল আলম।
চট্টগ্রাম তথা সারাদেশের ঐতিহ্যবাহী পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রধানতম সংগঠন ‘চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন- সিইউজে’। ১৯৬০ সালে গোড়াপত্তন হওয়া এই সংগঠন সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর মধ্যে সারাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সংগঠন এবং চট্টগ্রামের প্রথম ও সর্ববৃহৎ সংগঠন। এ সংগঠনের বয়স এখন ৬৫ বছর। সংগঠনটির হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ সোসাইটির মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনগুলো। এই সংগঠনের সদস্যরাই চট্টগ্রামে ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি, চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স স্ট্যান্ডিং কমিটি, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স কাউন্সিল ও চট্টগ্রাম টেলিভিশন রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক (সিটিআরএন) সহ গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠা করে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৪৪২। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বর্তমান নির্বাচিত কমিটির ২৮৪ জন সদস্যের মধ্যে ২৫০ জনেরও বেশি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য।