চট্টগ্রাম প্রতিদিন পেল ‌টিআইবির ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার’

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক বিশেষ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার’ পেয়েছেন দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু রায়হান তানিন। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য দেশের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে এটি বিবেচিত হয়। এর আগে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদক ফারুক মুনির পেয়েছিলেন ‘মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’।

এবার টিআইবির বিশেষ এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারের জন্য তিনটি বিভাগে সারাদেশ থেকে মোট ২৯টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা পড়ে। এগুলো থেকে বিচারকদের যাচাই-বাছাই শেষে তিনটি বিভাগে তিনজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম ক্যাটাগারিতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু রায়হান তানিনকে এই পুরস্কার দেওয়া হল। এছাড়া এই পুরস্কার পেয়েছেন আরও দুজন— সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সৈকত ভৌমিক এবং একাত্তর টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মুফতি পারভেজ নাদির রেজা। বিজয়ী সাংবাদিকদের প্রত্যেকে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও এক লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক পাবেন পুরস্কার হিসেবে।

মঙ্গলবার (২২ জুন) দুপুরে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক বিশেষ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার’ ঘোষণা করে টিআইবি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। গত ২২ বছর ধরে টিআইবি এই ‘দুর্নীতিবিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার’ দিয়ে আসছে। তবে এ বছর করোনাকালে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উন্মোচন নিয়ে প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদনগুলোকে ‘টিআইবি ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড ২০২০ কোভিড-১৯ রেসপন্স’ পুরস্কারের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন পেল ‌টিআইবির ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার’ 1

এবারের কোভিড-১৯ বিষয়ক বিশেষ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২০ প্রতিযোগিতার বিচারকদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আফসান চৌধুরী, বৈশাখী টেলিভিশনের প্ল্যানিং কনসালটেন্ট জুলফিকার আলী মাণিক এবং এমআরডিআইয়ের ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম হেল্প ডেস্কের হেড মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বাবু।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু রায়হান তানিন টিআইবির এবারের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারটি পান ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রামে করোনা রোগী আইসিইউ পায় না, ১২ হাসপাতালের গল্প পুরোটাই ফাঁকি!’ শীর্ষক প্রতিবেদনের জন্য।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত জেকেজি হেলথকেয়ারকে নিয়ে পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সৈকত ভৌমিক। ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ক্যাটাগরিতে ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজারে বিষাক্ত মিথানল’ শিরোনামের প্রতিবেদনের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মুফতি পারভেজ নাদির রেজা।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘চট্টগ্রামে করোনা রোগী আইসিইউ পায় না, ১২ হাসপাতালের গল্প পুরোটাই ফাঁকি!’ শিরোনামের প্রতিবেদনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করা এবং মৃত্যুবরণ করা বিভিন্ন রোগীর সরেজমিন তথ্য অনুসন্ধান করা হয়। এতে দেখানো হয়, চট্টগ্রামের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেড ব্যবহারের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঘটা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও তার পুরোটাই ছিলো শুভঙ্করের ফাঁকি! বিষয়টি ছিল যেন শুধুমাত্র বলার জন্য বলা। এই ১২টি হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা যেমন এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, আবার তাদের অনেকে এমনকি জানতেন ও না যে কী করতে হবে! ফলে করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হলেও অনেক রোগী এই ১২ হাসপাতালের কয়েকটি ঘুরেও আইসিইউতে ভর্তি হতে পারেননি। এতে করোনা আক্রান্ত অনেক গুরুতর রোগী আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এমনকি বিষয়টি নিয়ে খোদ চিকিৎসক নেতাদের মধ্যেই সংশয়, অসন্তোষ ও ক্ষোভ ছিল। তাদের অনেকের মতে, ১২টা হাসপাতাল প্রস্তুত থাকার গল্প ছিল প্রতারণা আর মিথ্যাচার। প্রতিবেদক আবু রায়হান তানিন তার এই প্রতিবেদনে অপরিকল্পিত, সমন্বয়হীন ও লোকদেখানো প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি সরেজমিন অনুসন্ধান করে সবিস্তারে তুলে ধরেন।

এর আগে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘সৌদি মরুর বুকে স্বপ্নভঙ্গের সাক্ষী চট্টগ্রামের দুই প্রবাসী’ শিরোনামে প্রতিবেদনের জন্য ‘মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ জিতেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক (বর্তমানে অন্য একটি অনলাইনমাধ্যমে কর্মরত) ফারুক মুনির। আন্তর্জতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ব্র্যাকের অংশীদারিত্বে বাস্তবায়িত প্রত্যাশা প্রকল্প থেকে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় যা সরকারের নেতৃত্বে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!