চট্টগ্রাম প্রতিদিনে হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংস্থা আরএসএফের উদ্বেগ

‘সহিংস সব হামলার ঘটনায় সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে’

দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন অফিসে হামলা চেষ্টার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। সংস্থাটি বলেছে, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে সাংবাদিকদের ওপর গুরুতর হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে। সংবাদপত্রের অফিসে হামলার পাশাপাশি এ সময়কালে সাংবাদিকদের লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে মারধরও করেছে পুলিশ ও রাজনৈতিক কর্মীরা।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। সংস্থাটি এসব ঘটনায় প্রতিটি হামলাকারীকে বিচারের আওতায় আনতে ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডার্স (ফরাসি: Reporters sans frontières;RSF) একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা। জাতিসংঘ, ইউনেস্কো, ইউরোপ কাউন্সিল এবং ফ্রাংকফনির আন্তর্জাতিক সংস্থায় আরএসএফের পরামর্শমূলক মর্যাদা রয়েছে। ২০০২ সাল থেকে আরএসএফ প্রতি বছর দেশ অনুযায়ী সাংবাদিকদের অবস্থা তুলে ধরতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক প্রকাশ করে থাকে। আরএসএফের প্রধান কার্যালয় ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত। ব্রাসেলস, লন্ডন, ওয়াশিংটন, বার্লিন, রিউ দি জেনিরো, তাইপে এবং ডাকার সহ সারা বিশ্বে এটির ১৩টি আঞ্চলিক ও জাতীয় অফিস এবং ১৪৬ জন প্রতিনিধি রয়েছে।

আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু গণমাধ্যমের বার্তাকক্ষ

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ১২ ফেব্রুয়ারি ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিন’র অফিসে হামলা চালানোর চেষ্টা করে একটি টেক্সটাইল কারখানার কর্মচারীরা।

এতে বলা হয়, ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে, প্যাসিফিক ক্যাজুয়ালস লিমিটেড টেক্সটাইল কারখানার কর্মচারী পরিচয়ে শত শত লোক তাদের ফ্যাক্টরির সমালোচনামূলক একটি রিপোর্ট সরানোর দাবিতে ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিন’ পত্রিকার অফিসে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। দাঙ্গা পুলিশ বাধা দেওয়ার পর, পত্রিকার কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদলিপি প্রকাশের আশ্বাস দেওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা সরে যায়। পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এই হামলাকে একটি সংগঠিত ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস তাদের বিবৃতিতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে হামলা চেষ্টার ছবিটি প্রতীকী রূপে ব্যবহার করেছে।

সেলিয়া মেরসিয়ারের উদ্বেগ

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের প্রধান সেলিয়া মেরসিয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক গুরুতর হামলা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সহিংসতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আশা করা হচ্ছিল পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু বাস্তবে সাংবাদিকরা এখনো অনিরাপদ। তারা রিপোর্টিং করার সময় হামলার শিকার হচ্ছেন, প্রতিবেদনের জন্য তাদের ওপর শারীরিক আক্রমণ করা হচ্ছে এবং বিক্ষোভকারীরা সংবাদপত্র অফিসে হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলার জন্য দায়ী সকলকে আইনের আওতায় আনা, সহিংসতার এই অসহনীয় চক্র বন্ধ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে আরএসএফ।’

চট্টগ্রাম প্রতিদিনে হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংস্থা আরএসএফের উদ্বেগ 1

সংবাদকর্মীকে হাতুড়িপেটা

এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুরে চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সমকালের প্রতিবেদক সোহাগ খানের ওপর একটি ক্লিনিক মালিকের ভাই ও তার সহযোগীরা হাতুড়ি ও ছুরি দিয়ে হামলা চালায়। সোহাগকে রক্ষা করতে গিয়ে তার তিন সহকর্মী—নিউজ ২৪-এর বিধান মজুমদার ওনি, বাংলা টিভির নয়ন দাস ও দেশ টিভির সাইফুল ইসলাম আকাশও আহত হন।

আরএসএফ আরও জানায়, মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনের সময়েও সহিংসতা এবং বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। ৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির প্রায় ২০ জন সমর্থকের সহিংস হামলার শিকার হন এটিএন নিউজের সাংবাদিক জাবেদ আখতার। তার সহায়তায় এগিয়ে আসা দুই সাংবাদিক—এনটিভির হাসান জাবেদ ও দীপ্ত টিভির আজিজুল ইসলাম পান্নুও এই হামলায় আহত হন।

এই হামলার পরদিন—৬ ফেব্রুয়ারি—ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সাংবাদিক মোহাম্মদ ওমর ফারুক, একাত্তর টিভির কর্মী সাইদ মাইনুল আহসান মারুফসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদকর্মীর ওপর হামলা চালায় একদল বিক্ষোভকারী।

পুলিশের হামলার শিকার গণমাধ্যমকর্মী

এছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবেদন করার সময় ছয় সাংবাদিক পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন বলেও জানায় আরএসএফ। এই সাংবাদিকরা হচ্ছেন—দ্য রিপোর্ট লাইভের কাওসার আহমেদ রিপন, কালের কণ্ঠের আসিফ উজ জামান ও মোহাম্মদ মাহাদী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আজহার রাকিব, জাগো নিউজের মোহাম্মদ রেদওয়ান ও ব্রেকিং নিউজের শিমুল খান।

আহত সাংবাদিকরা জানান, প্রেস কার্ড দেখানোর পরও পুলিশ তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এই ঘটনাগুলোকে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সহিংসতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংস্থাটি কর্তৃপক্ষকে এই হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) পুরো বিবৃতি পড়ুন এখানে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm