চট্টগ্রাম প্রতিদিনের রিপোর্টে ‘ডিবির গ্রেপ্তারকাণ্ড’ তদন্তের নির্দেশ আদালতের
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ‘৩ যুবকের গ্রেপ্তারকাণ্ড’ নিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করতে সিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেহ মোহাম্মদ নোমানের আদালত এ আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৩ যুবকের দুজনের গ্রেপ্তারের সময় ও স্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এই বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে সিএমপি কমিশনারকে। পুলিশের সিনিয়র একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে এটি তদন্ত করতে হবে। একই সাথে আসামি পক্ষের করা জামিন শুনানি ও ডিবির করা রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে ডিবির রিমান্ড আবেদন বাতিল করে এই আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে জামিন শুনানিতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘সন্ধ্যায় খালি হাতে আটক জিকু গভীর রাতে গ্রেপ্তার অস্ত্রসহ’ এবং ‘সিসিটিভি ফুটেজ জানালো অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার যুবক ৩দিন ধরে ছিল ডিবিতে’ শিরোনামে প্রতিবেদন দুটি আদালতের নজরে আনেন। এরপরই আসামি ও ডিবির আবেদন নাকচ করে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার আসামি শোয়েবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরজাহান ইসলাম মুন্না বলেন, ‘আমরা আদালতের সামনে রিমান্ড বাতিল আবেদনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রকাশিত সংবাদ আদালতে উপস্থাপন করেছি। এরপর ডিবির গ্রেপ্তারের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করলে আদালত মনযোগ সহকারে নিউজগুলো পড়েন। একই সাথে দুই মিনিটের ভিডিও দেখেন। এরপর রিমান্ড আবেদন বাতিল করে সিএমপি কমিশনারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে তিন দিনের সময় দিয়েছেন।’
মামলার অপর আসামি জিকু দাশের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বর আমি জিকু দাশের জামিনের আবেদন করেছি। তখন আদালত এই আবেদনটি ৩১ তারিখ শুনানির জন্য রাখেন। পরেরদিন ৩০ ডিসেম্বর ডিবি আসামিদের ৩দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। দুটি আবেদনের শুনানি হয় ৩১ ডিসেম্বর। ৩১ ডিসেম্বর বাদি-বিবাদি ও তদন্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শুনানি হয়। সেখানে আমরা চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদন দুটি আদালতের নজরে আনি। আদালত তখন্ উপস্থিত ডিবি কর্মকর্তাদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চান। ডিবি কর্মকর্তারা আদালতকে জানান তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। এ সময় আদালত ডিবির করা রিমান্ড আবেদন বাতিল করে এ বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন তলব করেন। ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে সিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেন আদালত। এ সময় আমাদের করা জামিন আদালতটি পেন্ডিংয়ে রাখেন আদালত।’
এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডিবির হাতে গ্রেপ্তার যুবকদের আটকের সময় নিয়ে প্রশ্ন উঠায় বিচারক সিএমপি কমিশনারকে সিনিয়র কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তা আদালতে সাবমিট করতে বলেছেন। একই সাথে তাদের রিমান্ড ও জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় জিকু চন্দ্র দাশ, শোয়েব, সাজ্জাতকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে ডিবি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রোববার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন টাইগারপাস রেলওয়ে পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একটি দেশিয় বন্দুক, একটি কার্তুজ, একটি ফোল্ডিং ছুরি ও একটি চাপাতিসহ তাদের গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেলো ভিন্ন তথ্য। ৩দিন আগে ২০ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪ টায় মুরাদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শোয়েবকে। সেই সংবাদের সূত্র ধরে আরো একটি ভিডিও ফুটেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসে। যেখানে দেখা যায় মামলার প্রধান আসামি জিকু দাশকেও ভিন্ন জায়গা থেকে ভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করেছে তারা। ওই সময় তাদের কাছ থেকে কোনো অস্ত্রও পাওয়া যায়নি।
এআরটি/এডি/এসএস