চট্টগ্রাম নগরে তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫৫৪ জনের, অর্ধেকই পথচারী

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে ৯০ শতাংশ

চট্টগ্রাম নগরীতে থামছে না সড়ক দুর্ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন পথচারী, যাত্রী থেকে শুরু করে চালকরা। অতিরিক্ত গতি, ট্রাফিক আইন অমান্যসহ বিভিন্ন কারণে সড়কে অকালে ঝরছে প্রাণ। সাত বছরে চট্টগ্রামে ৫৬৯ জন মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। সে হিসেবে সাত বছরে মৃত্যু বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এছাড়া ২০২১-২০২৩ পর্যন্ত তিন বছরে ৩৬২টি দুর্ঘটনায় ৫৫৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গত তিন বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে ৯০ শতাংশ। একইসঙ্গে গত তিন বছরে সড়কে সবচেয়ে বেশি ২৯৩ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭০ জন মারা গেছেন রাস্তা পারাপার ও হাঁটতে গিয়ে, যা মোট মৃত্যুর ৫৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম নগরে তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫৫৪ জনের, অর্ধেকই পথচারী 1

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ‘ওয়ার্ল্ড ডে অফ রিমেমব্রান্স ফর রোড ট্রাফিক ভিকটিমস’ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল সংলাপ ও চট্টগ্রাম শহর রোড সেফটি রিপোর্ট ২০২১-২৩ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান বক্তারা।

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস’র সহায়তায় সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবন কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয় এ সংলাপ। এতে প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামে সাত বছরে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন ১ হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫৬৯ জন, গুরুতর আহত হন ৪০৯ জন ও আহত হন ৫০ জন।

গত সাত বছরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২০২১ সালে। ওই বছর মারা যান ১০৩ জন। এরপর ২০২২ সালে মারা যান ৯৪ জন।

এদিকে গত তিন বছরে সড়কে সবচেয়ে বেশি ২৯৩ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭০ জন মারা গেছেন রাস্তা পারাপার ও হাঁটতে গিয়ে, যা মোট মৃত্যুর ৫৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল আরোহী মারা গেছেন ৪৫ জন। সে হিসেবে তিন বছরের ব্যবধানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে ৯০ শতাংশ। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। অন্যদের মৃত্যু হয়েছে রিকশা, মোটরচালিত রিকশা, ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ দুর্ঘটনায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম নগররে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে সব প্রতিষ্ঠানের কাজ করা জরুরি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে পুলিশ, বিআরটিএ, সিডিএ সবাই একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে সহজেই সড়কে শৃঙ্খলা আনা যাবে।

বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসফিকুজ্জামান আক্তার বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে চালকদের প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়কে বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হলে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোকে একটি ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সের আওতায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করার বিকল্প নেই। পথচারীদের জন্য জেব্রা ক্রসিং ও আন্ডারপাস তৈরি করতে হবে।

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে প্রতিবছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে ‘ওয়ার্ল্ড ডে অফ রিমেমব্রান্স ফর রোড ট্রাফিক ভিকটিমস’ দিবস পালন করা হয়।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm