চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতার কারণই জানে না সিডিএ-সিটি কর্পোরেশন

ছবি নিয়েই দুই সংস্থার দুমুখো কথা

দুই দশক ধরে চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা হয়ে আসছে। এই শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। কিন্তু দুই দশকেও জলাবদ্ধতা হওয়ার কারণ জানে না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষসহ (সিডিএ) সেবাদাতা সংস্থাগুলো। সর্বশেষ বুধবার (২২ জুন) জলাবদ্ধতা হওয়ার নেপথ্যের কারণ খুঁজতে এসব সংস্থার সমন্বয়ে চার সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে সিটি কর্পোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

এতে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে আহ্বায়ক এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও কাউন্সিল মোবারক আলীকে সদস্য করা হয়। এই কমিটি জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যদকর কোন ভূমিকা রাখবে, নাকি আগের মতো লোক দেখানো সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

তবে এই কমিটির উপর আশাবাদী মেয়র রেজাউল। তিনি বলেন, ‘এই কমিটি দ্রুতগতিতে সমস্যা চিহ্নিত করে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আমরা আশা করি এই বর্ষা মৌসুমে আর এরকম ভোগান্তি পোহাতে হবে না।’

ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনের নানা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু সুফল নেই। বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় নগরীর নিম্নাঞ্চল। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বুলি আওড়ান, আসছে বর্ষায় জলাবদ্ধতা হবে না, হলেও সহনীয় পর্যাায়ে থাকবে। কিন্তু সেসব বুলিতেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে দেখা যায় কোন কোন এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে হাটু থেকে কোমর পর্য্ন্ত পানি স্থায়ী হয় দুই থেকে তিন দিন। জলাবদ্ধতার দূর্ভোগ শেষ হয় না। দুর্বিসহ ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে।

শুক্রবার থেকে রোববার ভারী বর্ষণ হলে নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। হাঁটু থেকে কোমর পর্যান্ত দুই থেকে তিনদিন পানি স্থায়ী ছিল অনেক এলাকায়। একই সময়ে পানিতে তলিয়ে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বহদ্দারহাটস্থ পানি ভবন। এ সময় সিটি কর্পোরেশন মেয়রের বাড়িও ডুবেছে পানিতে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নয়িন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নরিসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্পে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয় করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিটি কর্পোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যয় করেছে ৯১৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা এবং ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা ব্যয় করে সিডিএ। কিন্তু এতো টাকা ব্যয় হওয়ার পরেও আগের তুলনায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

৯ জানুয়ারি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী বলেছিলেন, ‘গতবারের মতো এবার খালগুলো মাটি ও অস্থায়ী বাঁধ থাকবে না। পানি প্রবাহের জন্য খালগুলো এবার সচল থাকবে। এর মধ্যে খালের মুখে জলকপাটের কাজও শেষ হবে। তাই আগের মতো এবার জলাবদ্ধতা হবে না।’

বুধবার (২২ জুন) সিটি কর্পোরেশনের সভায় বিভিন্ন খালে মাটি ভরাট, পাইলিং সিট রেখে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা এবং মাটি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরির ছবি প্রজেক্টরে প্রদর্শন করা হয়। এসব ছবি সিডিএর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বলে দাবি করে সিটি কর্পোরেশন।

এসব ছবি সম্পর্কে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ জানান, ‘আজকে যেগুলো প্রদর্শন করেছে, সেগুলো অফিসিয়াল ভিজিটের ছবি নয়। ওনারা কোথা থেকে এনেছেন আমি জানি না।’

এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মধ্যে পরস্পরবিরোধী দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!