চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত আসনের দৌড়ঝাপ, সিগনাল গেছে দুজনের কাছে
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হতে চলছে শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাপ। নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে প্রার্থীরা এখন ঢাকামুখী তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চট্টগ্রাম থেকে কারা নারী সংরক্ষিত আসনে বসবেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। রাজনৈতিক সমীকরণে কাদের কপাল খুলতে যাচ্ছে, তা নিয়ে খোদ প্রার্থীরাও রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। তবে সবার নজর প্রধানমন্ত্রীর কৃপার ওপরে।
চট্টগ্রাম থেকে যাদের নাম সংরক্ষিত আসনের জন্য আলোচনায় আসছে তাদের অধিকাংশই প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের সদস্য।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম থেকে এরই মধ্যে হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েছেন দুজন প্রার্থী। গতবারের মতো এবারেও চট্টগ্রামের ভাগ্যে জুটতে পারে সংরক্ষিত দুই আসন।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া একবার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হলেও তিনি কখনও সংসদ সদস্য হতে পারেননি। এমনকি এবারের সংসদ নির্বাচনে তাকে আসন সমঝোতার মাধ্যমে ছাড়ও দেয়নি আওয়ামী লীগ। ফলে অনেকেরই ধারণা, এবার তার স্ত্রীকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে।
একাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সার ও আওয়ামী লীগ নেত্রী নিলুফার কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান এবং আরেক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।
সনি এবার ফটিকছড়ি থেকে নৌকা প্রতীকে সরাসরি সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।
ওয়াসিকা আয়শা খান বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক। দশম সংসদেও তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
একাদশ সংসদে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগেও একাধিক সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এবার মন্ত্রিসভা গঠনের আগেও তার নাম নিয়ে জোর গুঞ্জন ছিল।
চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে তাই ওয়াসিকা আয়শা খানের নাম আলোচনায় আসছে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে।
ওয়াসিকা আয়শা খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ১০ বছরে নিষ্ঠা ও সততার সাথে জনকল্যাণকর কাজসহ দলীয় ও সংসদীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। নেত্রীর কৃপায় সুযোগ হলে, আদর্শ সমুন্নত রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাব।’
সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী। তার স্বামী স্বামী আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। রিজিয়াও আছেন আলোচনায়। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় তিনি বিশেষ করে নারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। মহিলা সমাবেশ ও নারী শোভাযাত্রার মত কর্মসূচি পালন করে দলের পক্ষে জনমত গঠন করেছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া জিনাত সোহানা চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে। তিনি চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সদস্য। রাজনীতির পাশাপাশি ফারমিন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এবং বিজিএমইএরও সদস্য।
সুচিন্তা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি কাজ করছি। মহামারীর সময়ে দেশের সংকটকালে জনগণের পাশে ছিলাম। এছাড়া গত বেশ কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া, জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া, মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাস প্রচার এবং জঙ্গিবাদবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছি। সেই ঝুঁকি আমি নিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে জননেত্রী তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। সুযোগ দিলে আশা করি সেই লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারব।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে এক যুগ ধরে দায়িত্ব পালন করছেন দলের তৃণমূল থেকে উঠা আসা নেত্রী দিলোয়ারা ইউসুফ। ২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এই পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলের ‘কঠিন-দুঃসময়ে’ একনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবার তিনিও সংরক্ষিত আসনের দৌড়ে আছেন।
আলোচনায় থাকা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাসন্তী প্রভা পালিত বলেন, ‘সংরক্ষিত ও সরাসরি নির্বাচনের জন্য ৮ বার আমি দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছি। এবারও হাটহাজারী আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। প্রায় চার দশক ধরে আমি দলীয় রাজনীতি করছি। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলাম। ২০১৩ সাল থেকে আমি উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আমার সাংগঠনিক কার্যক্রম বিবেচনা করে নেত্রী যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করেন, তাহলে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে দায়িত্ব পালন করব।’
আলোচনায় থাকা দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি কঠিন সময়ে। তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে এখন দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক পদে আছি। আমার বাবা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল্লাহ আল হারুন ৫২র ভাষা আন্দোলন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ৬ দফা আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যদি আমাকে সুযোগ দেন, তাহলে আশা করি উনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব। উনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত নেতা আবু ছালেহ’র মেয়ে ডা. মেহজাবিন তুলিও আসন পেতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। আমার ছেলে অটিস্টিক হওয়ায় অনেক কিছুতে অংশ নিতে পারিনি। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’
সংরক্ষিত আসনে পদ পেতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে যারা রাজনীতিতে সক্রিয়, তাদেরকে নেত্রী বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেছেন। আমিও ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আছি। নেত্রী দায়িত্ব দিলে পালন করতে আমি প্রস্তুত।’
এদিকে ঢাকামুখী অবস্থানে আছেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সাজেদা সুরাতও। কেউ কেউ বলছেন, সংরক্ষিত আসনে চমকে দিতে পারেন তিনিও।
সাজেদা সুরাত বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুযোগ দিলে মানুষের সেবা করার পরিধি বাড়বে। কোনো দায়িত্ব না দিলেও আমি কাজ করে যাব। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য।’
এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন জাসদ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাদল, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমদের স্ত্রী শিরিন আহমদ ও ডা. আফসারুল আমীনের স্ত্রী কামরুন নেছা।
সিপি