চট্টগ্রাম থেকে ত্রাণ নিয়ে ছুটছে ছাত্র-জনতা, ট্রাকে যাচ্ছে নৌকাও

ছাত্র-জনতার সম্মিলনে এক অনন্য মানবতার প্রকাশ চলছে চট্টগ্রামে। সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে তলিয়ে যাচ্ছে অনেক গ্রাম। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না অনেকের। এরই মাঝে অনেকে বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত, কেউ আবার জীবনবাজি রেখেও সাহায্য করতে ছুটছেন অনবরত। ফেনী ও কুমিল্লা, ফটিকছড়ির বানভাসি মানুষকে বাঁচাতে চট্টগ্রামের হাজারও মানুষ নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে রাস্তায় নেমেছেন।

চট্টগ্রাম থেকে ত্রাণ নিয়ে ছুটছে ছাত্র-জনতা, ট্রাকে যাচ্ছে নৌকাও 1

২২ আগস্ট থেকে বন্যা দুর্গত এলাকায় নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে ছুটছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে তা বড় ট্রলি ও ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুর্গত এলাকায়। শনিবার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফান্ড তুলে বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বন্যার্তদের মাঝে।

এর মধ্যে ‘রিলিফ আফটার ফ্লাশ ফ্লাড’ চট্টগ্রামের কিছু তরুণ সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে ত্রাণ দিয়েছে। ‘এসএসসি ৯৫ ও এইচএসসি ৯৭ ফাউন্ডেশন’ নামের সংগঠনটিও একইভাবে ত্রাণ দিয়েছে। সংগঠন দুটি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ‘তারুণ্যের প্রতীক’, ‘আজকের মেনু’ নামের সংগঠন দুটিও বন্যার্তদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ফান্ড সংগ্রহ করছেন। চকবাজার এলাকার ‘ইয়ং ফেস্টিং ক্লাব’ বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ ও কাপড় সংগ্রহ করছে।

ছাত্র-জনতা বিভিন্ন ফান্ড থেকে ইতোমধ্যে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারের জন্য কেনা হয় নৌকা, ইঞ্চিন চালিত বোট, ভাড়া নেয়া হয় স্পিড বোটসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান। নানা ধরনের শুকনো খাবার দাবারের পাশাপাশি নৌকাসহ জীবনরক্ষাকারী নানা সামগ্রী নিয়ে অনেকে ছুটেছেন ফেনী, কুমিল্লা বা নোয়াখালীর বন্যাদুর্গত এলাকায়। কর্ণফুলী নদীতে চলাচলকারী অধিকাংশ সাম্পান, নৌকা ট্রাকবোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দুর্গত অঞ্চলে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ফেনী কুমিল্লা এবং নোয়াখালীসহ বিস্তৃত অঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তায় বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্ট্রোল রুম চালুর পাশাপাশি একটি বোট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রেখেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, বানভাসী মানুষদের সহায়তার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে প্রচুর খাদ্যসামগ্রী প্রদান করেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী শুক্রবার থেকেই এসব সামগ্রী দুর্গতদের মাঝে বিতরণ শুরু করেছে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মুছা আলম জানান, তাদের পক্ষ থেকে চারটি বোট এর মধ্যে ফেনীতে বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতায় পাঠানোর হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।

নৌবাহিনী জানিয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে ফেনীতে বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছে তাদের একটি কন্টিনজেন্ট। উদ্ধারকাজে ডুবুরি সামগ্রী, লাইফ-জ্যাকেট, স্পিডবোট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে। জরুরি চিকিৎসাসেবা ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীর অভয়মিত্র ঘাটের চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতির নেতাদের দাবি, ইতোমধ্যে ১৫০টি সাম্পান ফেনীর উদ্দেশ্যে রাওনা হয়েছে। সাম্পান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক তিন হাজার টাকা।

মাঝিরঘাট ট্রাক চলকদের দাবি, তারা ট্রাক ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৯ হাজার টাকা করে। মানবিক কাজে সহযোগিতার সময়ই এটা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm