চট্টগ্রাম টেস্টে বাঘকে খাঁচাবন্দী করে জয়ের পথে দৌঁড়াচ্ছে আফগানিস্তান
তৃতীয় দিন শেষে আফগানিস্তান এগিয়ে ৩৭৪ রানে
শুধু চালক বললে ভুল হবে পুরোটায় আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রেণে চট্টগ্রাম টেস্ট। চরম অনিশ্চিয়তার খেলা ক্রিকেটেও এখন অনেকটা নিশ্চিত করে বলে দেয়া যায় এই টেস্ট হারতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন শেষে আফগানিস্তান এরই মধ্যে এগিয়ে আছে ৩৭৪ রানে। হাতে শেষ দুই উইকেট নিয়ে চতুর্থ দিন কোথায় গিয়ে থামছে তার উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের সামনে পাহাড়ের উচ্চতা কতটুকু হবে। এমনিতে এখন যে উচ্চতা সেটি পাড়ি দেয়াও এক কথায় অসম্ভব। চতুর্থ ইনিংসে যদিও বাংলাদেশের চারশ উপর (৪১৩ রান) একটি ইনিংস আছে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে, কিন্তু সেই ম্যাচেও হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। চতুর্থ ইনিংসে বিশবারের উপর বিভিন্ন দেশ তিনশর উপরের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে। চারশ’র উপরে তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও আছে তিনবার। কিন্তু এর কোনটিতে বাংলাদেশের নাম নেই। এ যাবৎকালে বাংলাদেশের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ড হচ্ছে মাত্র ২১৭ রান, গ্রানাডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
তাই বলা যায় বাংলাদেশের হারটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র! আফগানদের বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিনেই ৩৭৪ রানের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়লো বাংলাদেশ। বাকি দুদিনে যে কি হবে টাইগারদের। অলৌকিক কিছু না হলে এখন চট্টগ্রাম টেস্ট বাঁচানোই পুরোপুরি অসম্ভব হয়ে পড়েছে সাকিব আল হাসানের দলের সামনে।
তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হয়েছে ২০ মিনিট আগে। আলোকস্বল্পতার কারণে ২০ মিনিট আগে খেলা শেষ করতে হয় আম্পায়ারদের। তাতেই দ্বিতীয় ইনিংসের আফগানদের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রান। প্রথম ইনিংসে তারা এগিয়ে ১৩৭ রানে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এখন ৩৭৪ রানে এগিয়ে সফরকারী আফগানরা। বাকি ২ উইকেটে আর কত রান যোগ করে রশিদ খানের দল, সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রায় ৪০০ রানের একটা লক্ষ্য যদি বাংলাদেশের সামনে ছুড়ে দিতে পারে আফগানরা, তাহলে সেই রান পাড়ি দিয়ে টাইগারদের ম্যাচ জয় হবে প্রায় অসম্ভব।
কারণ, আফগান স্পিনারদের ঘূর্ণির সামনে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২০৫ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে চতুর্থ ইনিংসে চট্টগ্রামের উইকেট পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে রশিদ খানদের দখলে।ওই অবস্থায় চতুর্থ ইনিংসে এত বড় একটি স্কোর তাড়া করে জেতা তো দূরে থাক, ড্র করাও সম্ভব হবে না টাইগারদের। সুতরাং অলৌকিক কিছু না হলে এখন পরাজয়ই বলতে গেলে অবধারিত।
এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুর ত্রিশ মিনিটের মধ্যে সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চারটি উইকেটের পতন দেখে সবাই। যার মধ্যে প্রথম দুটি বাংলাদেশের এবং অন্য দুটি আফগানিস্তানের। আগের দিনের ৮ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের প্রথম ওভারটা শুরু করেন আফগানিস্তানের অফস্পিনার মোহাম্মদ নবী। আর তৃতীয় ডেলিভারিতেই তিনি ফিরিয়ে দেন তাইজুলকে। ৫৮ বল মোকাবেলায় ১৪ রান করা কাটা পড়েন পরিষ্কার বোল্ড আউটে। এর দুই ওভার পর রশিদ খানের দারুণ এক ডেলিভারি বুঝতে না পেরে বসে প্যাড দিয়ে ঠেকিয়ে দেন নাইম হাসান। আম্পায়ারও আঙুল তুলতে দেরি করেননি। রিভিউ নিলেও তাতে কাজ হয়নি।
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে আশা জাগিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। টানা দুই বলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে আফগানিস্তানকে কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলপতি। তবে ৪ রানে ২ উইকেট হারানো আফগানরা এরপর ভালোভাবেই লড়াইয়ে ফিরেছে। এরপর দৃশ্যপটে নাঈম হাসান। সকালে নিজের দ্বিতীয় ওভারে নাঈম হাসান বাংলাদেশ শিবিরে আনন্দ এনে দেন। হাসমতউল্লাহ শহীদি তার বলে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য হলেন। মিডলস্ট্যাম্পে পড়া বলটা বাঁক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শহীদির ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের বিশ্বস্ত হাতে। চলতি টেস্টে স্লিপ কর্ডনে এটি সৌম্য সরকারের তৃতীয় ক্যাচ।
এরপর একটা করে ওভার হচ্ছে আর সাকিব আল হাসান মাঠের পশ্চিম দিকের স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাচ্ছেন। স্কোর দেখার সঙ্গে সঙ্গে টেনশন বাড়ছে তার। আফগানিস্তানের প্রতিটা রানেই যে চট্টগ্রাম টেস্ট এখন বাংলাদেশের জন্য ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। তৃতীয়দিন দ্বিতীয় ইনিংসে চা পানের বিরতিতে যাওয়ার আগে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৫৬ রান। চা বিরতির ত্রিশ মিনিট আগে আসগর আফনান ১০৮ বলে ১২৩ মিনিট উইকেটে থেকে চার বাউন্ডারি আর জোড়া ছয়ে বরাবর ৫০ রান করে তাইজুলের প্রথম শিকারে পরিণত হন। আসগর প্রথম ইনিংসেও ফিফটির (৯২ রান) দেখা পেয়েছিলেন। আউট হওয়ার আগে আসগর সতীর্থ ইবরাহিম জাদরানের সাথে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০৮ রান সংগ্রহ করেন। ইবরাহিম জাদরান অপরাজিত আছেন ৮২ রানে। তার সাথে ৪ রান নিয়ে আছেন আফসার জাজাই।
চা পানের বিরতির সময়ে ম্যাচে এখন তাদের লিড ২৯৩ রানের। আফগান ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাট করছেন তাতে করে বাংলাদেশের সামনে অনতিক্রম্য এক পাহাড় দাঁড়াচ্ছে কোন সন্দেহ নেই। কোনো সন্দেহ নেই এই টেস্টের চতুর্থ এবং শেষ ইনিংসে বাংলাদেশের জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ম্যাচের দ্বিতীয়দিন থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্পিন বেশ ভালোই বাঁক নিচ্ছে। স্পিনাররা দাপট দেখাচ্ছেন। আর রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীদের সামনে তিন শতাধিক রান তাড়া করে ম্যাচ জেতা এক কথায় প্রায় অসম্ভব। তাই বলা যায় চট্টগ্রাম টেস্ট বাংলাদেশের হাতছাড়াই হয়ে গেল।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, যে উইকেটে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা টিকে থাকতে নাভিশ্বাস উঠে যায় সেখানে টেস্ট ক্রিকেটে একেবারে শিশু আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা কি অবলীলায় উইকেটে থেকে রান করে যাচ্ছেন। দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও যে রকম ধৈর্য্য আর কৌশল নিয়ে ব্যাট করে চলেছে তাতে করে বাংলাদেশের ভবিষ্যত ক্রিকেট বড়ই ভুল পথে হাঁটছে বলে প্রতীয়মান হয়। ক্রিকেটের নবীশ এই দলটি টাইগারদের শেখাচ্ছে কিভাবে ধৈর্য্য দেখিয়ে টেস্ট খেলতে হয়।