চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী নারায়ণ হেরে যাওয়ার নেপথ্যে ইভিএমের সূক্ষ্ম ‘জালিয়াতি’

ইভিএমের সুপার জালিয়াতিতে বদলে দেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের ফল। ফল বদলে দেওয়ার অভিযোগে এবার হয়েছে মামলা। সেই মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন রাঘববোয়ালরা!

জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির মহাসচিব, জয় প্রকাশ নারায়ণ রক্ষিত মামলার বাদি। নারায়ণের অভিযোগ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন। কিন্তু ইভিএমের সুপার জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে পরাজিত করা হয়েছে।

হেভিওয়েট প্রার্থী নারায়ণ রক্ষিতের প্রাপ্ত ভোট পেয়ারুলকে দেখিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও প্রশাসনের রাঘববোয়ালরা। প্রতিকার পেতে এবার চট্টগ্রাম আদালতে গেলেন নারায়ণ রক্ষিত। মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে রাঘববোয়ালরা।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলামের সঙ্গে আসামির তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক সাংসদ আবদুল মোতালেব, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মিনহাজ, সাবেক জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন, পটিয়ার সাবেক সাংসদ মোতাহের হোসেন এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ।

চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট—১ এর আদালতে গত ১৯ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী নারায়ণ রক্ষিত। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ৫০-৬০ জনকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে যান জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির মহাসচিব নারায়ণ রক্ষিত। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুলের নির্দেশে আসামিরা নারায়ণ রক্ষিতকে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি, হুমকি-ধমকি দেন। তড়িঘড়ি করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বের হলে নারায়ণ রক্ষিত এবং তার সমর্থনকারী আকতার কালাম ও প্রস্তাবকারী আবু তাহেরের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান আসামিরা। এ সময় নারায়ণ রক্ষিতসহ প্রস্তাবক ও সমর্থক দৌড়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আকতার কালাম ও আবু তাহেরকে অপহরণ করে ফটিকছড়ির জঙ্গলে নিয়ে যান আসামিরা। পরে নারায়ণ রক্ষিতের তৎপরতায় আসামিরা তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২ হাজার ৭৩০ ভোটার ভোট দেন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নারায়ণ রক্ষিত ২ হাজার ৫৬৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। কিন্তু ইভিএম’র সুপার জালিয়াতিতে বদলে দেওয়া হয় ফলাফল। নারায়ণ রক্ষিতের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয় ১২৪। কারচুপি করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে আনারস প্রতীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এসময় কারচুপির এই ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করলে নারায়ণ ও তার সমর্থকদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এ নিয়ে পরবর্তীতে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিলে গুম-খুনের হুমকি দেন আসামিরা।

জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির মহাসচিব ও মামলার বাদি জয় প্রকাশ নারায়ণ রক্ষিত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জনপ্রিয়তায় পেয়ারুলের চেয়ে এগিয়ে ছিলাম। পেয়ারুল দলীয় শক্তির অপব্যবহার করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচনকে কলঙ্কিত করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন।’

তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনে লড়তে না পারার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টার পরও আটকাতে না পেরে পেয়ারুল গুণ্ডাবাহিনীর মাধ্যমে ইভিএম জালিয়াতি করে। আমি ২ হাজার ৫৬৭ ভোট পেয়ে জয়ী হই। পেয়ারুল ১২৪ ভোট পেয়ে হেরে যান। কিন্তু দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বদলে দেওয়া হয় ভোটের ফলাফল। আমার প্রাপ্ত ভোট পেয়ারুলের দেখিয়ে, তাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। এসব বিষয়ে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm