চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩ কোটির মেশিন কেনা হয় ১০ কোটিতে, দামি দামি যন্ত্র হেলায় অকেজো

দুই বছরে ৯ কোটি টাকা লুটপাট মেশিন কেনার নামে

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে হেলায় পড়ে আছে কয়েক কোটি টাকার মেশিন। ফলে প্রতিনিয়ত চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এরমধ্যে রয়েছে কয়েক কোটি টাকা দামের এমআরআই মেশিন। এছাড়া জার্মানির এক্সরে মেশিন, ডপলার টুডি মেশিন, ল্যাপারেস্কপি মেশিন, মনিটর, অ্যানেসথেসিয়া মেশিনসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি অকেজো পড়ে আছে। এসব যন্ত্রপাতির অনেকগুলো আবার বাক্সবন্দি অবস্থাতেই হারিয়েছে ওয়ারেন্টির মেয়াদ। এসব যন্ত্রপাতি ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) পাঠানো হলেও সেখানেও জনবল সংকট থাকায় এখনও হয়নি মেরামত।

এর মধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি কিনতে বাজারমূল্যের তিন-চার গুণ বেশি টাকা দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামের তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী ওইসময় ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাজার মূল্যে এমআরআই মেশিনের দাম দেখান ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এছাড়া চারটি কালার ডপলারের বাজারমূল্য ১ কোটি ৮ লাখ টাকা হলেও ব্যয় দেখানো হয় দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এরপর চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২০১৪ সালের ২৯ মে থেকে ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে যন্ত্রপাতি কেনার নামে ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তৎকালীন সাবেক সিভিল সার্জনসহ নয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুদক।

এদিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নষ্ট পড়ে থাকা যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে, ৩ কোটি টাকা দামের এমআরআই মেশিন, ৬০-৬৫ লাখ টাকা দামের জার্মানির এক্সরে মেশিন ১টি, ১০০ এমএ পোর্টেবল এক্সরে মেশিন ১টি, ৫০০ এমএ এক্সরে মেশিন ১টি, ৫০০ এমএ এক্সরে মেশিন ১টি, ৩০০ এমএ এক্সরে মেশিন ১টি, এক্সরে ২০ এমএ ১টি, কালার ডপলার টুডি মেশিন ২টি, ৬ লাখ টাকা দামের অ্যানেসথেসিয়া মেশিন ৮টি, ৬৫ হাজার টাকা দামের ফ্রিজারেটর ১টি, ডেন্টাল ইউনিট ১টি, ল্যাপারেস্কপি মেশিন ১টি, ল্যাপারেস্কপি মনিটর ১টি। ইতোমধ্যে মেশিনগুলোর ওয়ারেন্টি মেয়াদও পার হয়ে গেছে।

হাসপাতাল থেকে পাওয়া মেশিনগুলোর তালিকার নামের পাশে মেরামতযোগ্য ও নিমিউতে অবহিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ থাকলেও সেসব মেশিনের একটিও এখনও মেরামত হয়নি।

জানা গেছে, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা দিতে পারছে না চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালের তিনটি অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র একটি। বাকি দুটিতে যন্ত্রপাতির অভাবে অপারেশন কার্যক্রম হয় না বললেই চলে। দুটি অপারেশন থিয়েটারের টেবিল এবং সিলিং লাইট নষ্ট। সেইসঙ্গে সংকট রয়েছে ডায়াথারমি, ল্যাপারেস্কপি মেশিনের। ডিজিটাল এক্সরে ও প্যাথলজিতে থাকা অ্যানালাইজার মেশিনও নষ্ট পড়ে আছে।

এক্সরে মেশিন নষ্ট হওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, মেশিনগুলো আনার পর দক্ষ টেকনিশিয়ানের অভাবে ফেলে রাখা হয়। বাক্সবন্দি অবস্থাতেই মেশিনগুলোর ওয়ারেন্টির মেয়াদ চলে যায়।

এসব সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সচল রাখার দায়িত্ব নিমিউ অ্যান্ড টিসির। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে আছে মাত্র সাতজন স্নাতক প্রকৌশলী ও চারজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী। এই সীমিত কারিগরি জনবল দিয়েই চলছে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল যন্ত্রপাতির মেরামত কাজ। ফলে কাঙ্ক্ষিত ও মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

যন্ত্রপাতি মেরামত না হওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিপুল পরিমাণ মেডিকেল যন্ত্রপাতি নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে ওইসব যন্ত্রপাতি মেরামত করতে পারছে না নিমিউ। আমরা অবহিত করেই যাচ্ছি। আশা করছি মেশিনগুলো মেরামত হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm