চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গড়ে উঠছে বিশ্বমানের ইনডোর

ইনডোর তৈরিতে ৬ কোটি টাকা খরচ করছে জাইকা

বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৈরি হচ্ছে ইনডোর। জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা’র অর্থায়নে ও সম্পূর্ণ তাদের তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে এই ইনিডোর। ইনডোরটি তৈরি করতে তারা খরচ করছে প্রায় ৬ কোটি টাকা।

ক্রিকেট ইনেডার তৈরি করছে জাইকা, এটি শুনলে যে কারও মনে প্রশ্ন উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক। আসল ঘটনা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁসে আউটার লিংক রোড (রাস্তা) তৈরী করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। রাস্তাটি ভাটিয়ারি থেকে শুরু হয়ে সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ঘেঁসে পতেঙ্গায় পড়েছে, যা কিনা কর্ণফুলি ট্যানেলের সঙ্গে যুক্ত হবে। ওই ট্যানেলের ভেতর দিয়ে আনোয়ারা হয়ে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারেও যাবে।

কিন্তু এই রাস্তার ফ্লাইওভারের ল্যান্ডিং এমনই এক জায়গায় নির্মিত হচ্ছে যেখানে এক সময়ে জহুর আহমেদের ইনডোর স্টেডিয়াম ছিল। এর মানে দাঁড়াচ্ছে লিংক রোড ও ফ্লাইওভার তৈরী করতে গিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে জহুর আহেমেদের ভুমি অধিগ্রহন করতে হয়েছে। ফলে অন্যপায় হয়ে ইনডোরটিও ভাঙতে হয়েছে। তবে নগরীর উন্নয়নে যতটুকু তারা নিয়েছে টাইগারদের ক্রিকেটোন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দিচ্ছে তার চেয়ে ঢেঢ় বেশি।

কেননা আগের ইনডোর এর বদলি হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জাইকা’র অর্থায়নে নতুন যে ইনডোর তৈরী করছে তা সেটা দেখতে যেমনি নয়নাভিরাম তেমনি বিশ্বমানের। খোলা ঝিনুকাকৃতির ইনডোরের অবস্থান স্টেডিয়ামের পেছনেই। আরো পরিষ্কার করে বললে স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেইট দিয়ে প্রবেশ করলে ঠিক হাতের বাঁ দিকে চোখে পড়বে। নির্মানাধীন বিধায় কাছে গিয়ে এর সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে অনুমান করা গেল না। তবে ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারি খান রুবেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল নবনির্মিত এই ইনডোরের সুযোগ সুবিধা আগেরটির চেয়ে অধিকতর উন্নত। এবং এর নকশা খোদ জাইকাই তৈরী করে দিয়েছেন। এটি তৈরীতে আনুমানিক ৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানান সাগরিকার এই ভেন্যু ম্যানেজার।

ভেন্যু ম্যানেজার জানান, ‘যে ইনডোরটি দেখছেন এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কিংব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তৈরী করে দেয়নি। এটা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তপক্ষ জাইকা’র অর্থায়নে করে দিচ্ছে। তারা করে দিচ্ছে কারণ আমাদের স্টেডিয়ামের কিছু জায়গা তারা অধিগ্রহন করেছে। স্টেডিয়ামের ইনডোর ফ্লাইওভারের ল্যান্ডিংয়ের ওখানে পড়েছে বলে ওই জায়গাটা তারা সরকার থেকে অধিগ্রহন করেছে। ওখানে আমাদের আগের ইনডোর ছিল। বদলি হিসেবে ওই ইনডোরটা এখানে করে দিচ্ছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ৬ কোটি টাকা।’

তিনি আরও জানান, ‘ক্রিকেটারদের সুবিধার জন্য জিমনেশিয়াম ওরা ইনডোরের মধ্যে করে দিচ্ছে, লকার রুম করে দিচ্ছে, গোসলের জন্য জায়গা থাকছে, কনফারেন্স রুম ও চেঞ্জিং রুম থাকছে। এমন আধুনিক ইনডোর আমাদের দেশে আর নেই। নকশা থেকে শুরু করে তদারকি সব ওদের। আমাদের কিছুই করতে হচ্ছে না। আমাদের আগে যে ইনডোর ছিল তার অবস্থা ভাল ছিল না। অনেক বছর তো হয়েছে ওটা করেছিলাম। তো নতুন ইনডোর তৈরী সময়ের ব্যাপার ছিল। হয় ক্রিকেট বোর্ড করত না হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তবে একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমি বলব ওরা যে ডিজাইন করেছে সেটা অমরা করতে পারলেও খুবই কষ্ট হত। জাপানি ওরা আমাদের সঙ্গে কথা বলে ডিজাইন করেছে।’

চট্টগ্রামের সাগরিকা রোডে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁসে অবস্থিত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম যাত্রা শুরু করেছিল ২০০৪ সালে। সেবারই এখানে বসেছিল আইসিসির অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আসর। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মর্যাদা পেতে সময় লেগে যায় আরও দুই বছর। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভেন্যুটি আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা পায় এই ‘লাকি ভেন্যু’টি। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!