চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে এলিমিনেটরে পাঠাল রাজশাহী রয়্যালস

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স এবং রাজশাহী রয়্যালস দু’দলই শেষ চার নিশ্চিত করে সবার আগে। তবে এবারের বঙ্গবন্ধু বিপিএলে এই দু’দলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থানের লড়াই ছিল বেশ দেখার মতো। এরপরও শনিবারের ম্যাচ দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ কারা খেলবে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের কোয়ালিফায়ারে আর কারাই বা এলিমিনেটর তা নির্ধারিত হবে এই ম্যাচ দিয়েই। সেই হিসাবে দিনের প্রথম ম্যাচে ভাগ্য গড়া হয়ে গেছে রাজশাহী রয়্যালসের। ক্রিস গেইলের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৮ উইকেটে হারিয়ে কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে আন্দ্রে রাসেলের দল।

১৪ বল হাতে রেখে এই জয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠল রাজশাহী। ১২ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১৬ পয়েন্ট। রান রেটে চট্টগ্রামের (দ্বিতীয়) চেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী (রান রেট ০.৪২)। চট্টগ্রাম ১২ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত টেবিলের দুইয়ে। আপাতত বলার কারণ, দিনের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের মুখোমুখি ঢাকা প্লাটুন। এ ম্যাচে যে দলই জিতুক না কেন উঠে আসবে টেবিলের শীর্ষ দুইয়ে। রান রেটে তখন তিনে নেমে যেতে হবে চট্টগ্রামকে (০.১২৯)। ১১ ম্যাচ থেকে খুলনা (রান রেট ০.৮৯৯) ও ঢাকার সংগ্রহ (রান রেট ০.৭০১) ১৪ পয়েন্ট। ফলে যেই জিতুক, সেই টপকে যাবে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীকে। নিয়ম অনুযায়ী, টেবিলের তৃতীয় ও চতুর্থ দলকে খেলতে হবে এলিমিনেটর (হারলেই বাদ) ম্যাচ। অথচ, রাজশাহীর বিপক্ষে হারের আগেও চট্টগ্রাম ছিল টেবিলের শীর্ষ দল!

শনিবার দিনের প্রথম ম্যাচে সহজ কায়দায় চট্টগ্রামের ১৫৫ রান টপকে গেল রাজশাহী রয়্যালস! নামের মতো ঠিক একেবারে রাজকীয় ঢংয়ে! আর এই দাপুটে ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ওপেনার লিটন দাস। ৩০ বলে হাফসেঞ্চুরি করা লিটন দাস শেষপর্যন্ত খেললেন ৭৫ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। বিপিএলের ইতিহাসে এটি লিটন দাসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। রাজশাহীর এই ম্যাচ জয়ের দিনে লিটন দাস বিপিএলে এক হাজারি রান ক্লাবে নাম লেখালেন।

বিপিএলে নিজের সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে চট্টগ্রামকে এলিমিনেটরে পাঠাতে বড় ভূমিকা রাখেন লিটন দাশ
বিপিএলে নিজের সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে চট্টগ্রামকে এলিমিনেটরে পাঠাতে বড় ভূমিকা রাখেন লিটন দাশ

ম্যাচ জেতার ভিত্তি রাজশাহী পেয়ে যায় লিটন দাস ও আফিফ হোসেনের ওপেনিং জুটিতেই। ১০.২ ওভারে রাজশাহীর ওপেনিং জুটি গড়ে ৮৮ রান। মিরপুরের দুপুরে চট্টগ্রামের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল উইকেট বেশ কঠিন। কিন্তু একই উইকেট লিটন দাসের ব্যাটিং জানান দিল-আসলে সমস্যাটা উইকেটে নয়, ব্যাটিংয়ের কৌশলে। যে পরিকল্পনা নিয়ে এই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলে লিটন দাস, তার পুরোটাই কাজে লাগালেন। আফিফ ৩১ বলে ৩২ রান করে ফিরেন। কিন্তু লিটন ৪৮ বলে ১১ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৭৫ রানের ইনিংস খেলে যখন জিয়াউর রহমানের বলে এলবিডব্লু হয়ে যখন ফিরলেন তখন ম্যাচ জয় থেকে রাজশাহী মাত্র ১৮ রান দূরে দাঁড়িয়ে। আন্দ্রে রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা পুরো করেন রাজশাহী রয়্যালসের পাকিস্তানি অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক। মাত্র ২৫ বলে অপরাজিত ৪৩ রান করে তিনি।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিং জুটিতে ৬.২ ওভারে মাত্র ৩৮ রান তুলতে পারে চট্টগ্রাম। একপ্রান্ত ওপেনার যখন ক্রিস গেইল তখন এটাকে মামুলি রান মানতেই হচ্ছে। ২০ ওভার শেষে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ৫ উইকেটে ১৫৫ রানকেও কি খুব আহামরি মনে হচ্ছে? উত্তরটা জানা হয়ে গেছে রাজশাহী রয়্যালসের ইনিংস শেষে।

চট্টগ্রামের ১৫৫ রানের এই ইনিংসে ব্যাটসম্যান হিসেবে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ৩৪ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। মুলত শেষ তিন ওভারে মারকুটো ব্যাটিংয়ের সুবাদেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের রান দেড়শ’র ওপরে যায়। শেষ তিন ওভারে চট্টগ্রাম ৪৫ রান তুলে। ১৮ নম্বর ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বী দুই বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ১৭ রান খরচা করেন। আর ইনিংসের শেষ ওভার করতে এসে ফরহাদ রেজা কোথায় বল ফেলবেন ঠিক করতেই পারছিলেন না। প্রথম পাঁচ বলের সবগুলোই করলেন ফুলটস! তার ওভারের প্রথম দুই বলে মাহমুদউল্লাহ দুটি বাউন্ডারি হাঁকালেন। চতুর্থ বলে জিয়াউর রহমান উড়িয়ে পাঠালেন দড়ির বাইরে, ছক্কা! সবমিলিয়ে ফরহাদ ম্যাচে করা তার একমাত্র ওভারে ব্যয় করলেন ১৭ রান।

ক্রিস গেইল আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ঠিক ২৩ রান করেই ফিরলেন। ২ ছক্কা ও ১ বাউন্ডারিতে ২১ বলে গেইল এই রান করেন। মিডলঅর্ডারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ৪৮ এবং নুরুল হাসান সোহানের ১৭ বলে ঝড়গতির ৩০ রান চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে এনে দিল চ্যালেঞ্জিং স্কোর। এই ম্যাচেও রাজশাহী রয়্যালসের অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেল আটজন বোলার ব্যবহার করেন। তবে রবি বোপারাকে তিনি বোলিংয়েই ডাকলেন না

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৫৫/৫ (২০ ওভারে, গেইল ২৩, জুনায়েদ ২৩, ইমরুল ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৪৮*, সোহান ৩০, ইরফান ১/২৪, শোয়েব মালিক ১/১১, আফিফ ১/১৮, তাইজুল ১/২০)।
রাজশাহী রয়্যালস: ১৫৬/২ (১৭.৪ ওভারে, আফিফ ৩২, লিটন দাস ৭৫, শোয়েব মালিক ৪৩*)।
ফল: রাজশাহী রয়্যালস ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: লিটন দাস।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!