অ্যাডভোকেট সম্ভু নাথ নন্দির সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে শেষ হলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সমাবেশে চালানো গণহত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জেলা দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে সাক্ষ্য দেন অ্যাডভোকেট সম্ভু নাথ নন্দি। এ নিয়ে ৫৩জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো। মামলার যুক্তি-তর্ক শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৯ জানুয়ারি। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, গণহত্যার ৩২তম বার্ষিকীর আগেই হয়তো মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে।
এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আদালত আগামী ১৯ জানুয়ারি যুক্তিতর্কের দিন ধার্য করেছেন। আমরা আশা করছি এ মামলার রায় হয়তো ২৪ জানুয়ারির আগেই ঘোষণা হতে পারে। মামলাটি বিভাগীয় বিশেষ আদালতে আছে। সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারক না থাকায় এখন চার্জে আছেন জেলা জজ আদালত। এর আগে ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ আদালত মুন্সি আবদুল মজিদের আদালতে প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট শৈবাল দাশ ও সাংবাদিক কামরুল ইসলাম সাক্ষ্য দিয়েছেন।’
অ্যাডভোকেট সম্ভু নাথ নন্দি আদালতে তাঁর সাক্ষ্যে বলেন, ‘ঘটনার দিন লালদিঘী ময়দানে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ ছিল। পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী মিলনায়তনে আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময় সভা ছিল। আমরা তাঁর আগমনের অপেক্ষায় ছিলাম। নেত্রীর গাড়ি নিউমার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিওর সামনে পৌঁছানো মাত্রই মামলার প্রধান আসামি রকিবুল হুদার নির্দেশক্রমে অন্যান্য আসামিরা নেত্রীর গাড়ি বহর লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। এতে ২৪ জন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছিলেন, অসংখ্য আহত হয়েছিলেন।’
এর আগে ২০ নভেম্বর সাংবাদিক কামরুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রীর সমাবেশ কভারের দায়িত্ব ছিল আমার উপর। আমি তখন দৈনিক খবরের প্রতিবেদক ছিলাম। চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হতাহত হতে দেখলাম। তাৎক্ষণিকভাবে ২৪ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছিলাম আমরা। এই খবরের ফলোআপ প্রতিবেদন করার জন্য পরের দিন যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই তখন পুলিশ আমাকেসহ আমাদের গণমাধ্যমে কর্মরত কোন সাংবাদিককে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেয়নি।’
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরের লালদিঘী ময়দানে সমাবেশ নির্ধারিত ছিল চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর গাড়ি বহর তখন নিউ মার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিওর সামনে আসে। আচমকা গর্জে উঠেছিলো চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রাইফেল। এলোপাথাড়ি গুলিতে একে একে মৃত্যুর কোল ঢলে পড়েন মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন কুমার বিশ্বাস, স্বপন চৌধুরী, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, শাহাদাত, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া ও মো. কাসেম।
১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। মামলার আসামিরা হলেন, চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, ইন্সপেক্টর জে সি ম-ল, কনস্টেবল মুশফিকুর রহমান, বশির উদ্দিন, আব্দুস সালাম, প্রদীপ বড়ুয়া, মমতাজ উদ্দিন ও মো. আবদুল্লাহ। জে সি ম-ল ছিলেন কোতোয়ালী অঞ্চলের পেট্রোল ইন্সপেক্টর। ঘটনার পর থেকেই তার কোন হদিস নেই। ২০০০ সালের ৯ মে এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
উল্লেখ্য,এ মামলার বাদি আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা, প্রধান আসামি তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের এবং মামলার এক আসামি পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এফএম/এসএস