চট্টগ্রামে ২-ইথিলহ্যাক্সনল (২ইএইচ) অকটানল আমদানির পর হারমোনাইজড সিস্টেম কোড (এইচএস কোড) নিয়ে শুল্ক বিড়ম্বনায় পড়েছেন আমদানিকারকরা। আগে যেই কোডে আমদানি করা পণ্য খালাস করা হতো সেই কোড পরিবর্তন করে দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে বাড়তি শুল্ক গুনতে হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। আগে যেখানে প্রতিকেজিতে ৯০ সেন্ট শুল্ক মূল্যে পণ্য খালাস করা যেতো, সেখানে নতুন এইচএস কোডে পণ্য খালাস করতে হলে প্রতিকেজিতে শুল্ক মূল্য দিতে হবে ২ দশমিক ১৩ ডলার। আর এই পদ্ধতিকে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন আমদানিকারকরা।
এই বিষয়ে জাহান ট্রেডার্স নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কাস্টমস কমিশনার বরাবরে চিঠি চালাচালি ও তদবির করেও সুরাহা পায়নি।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন এইচএস কোড ২৯০৫.১৬.৯০ ব্যবহার করে আমদানি করা ২ইএইচ অকটানল প্রতিকেজিতে ৯০ সেন্ট শুল্ক দিয়ে খালাস করতো আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত ১ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নতুন এইচএস কোড ২৯০৫.১৬.১০ ব্যবহার করে এই ধরনের পণ্য খালাসের কথা জানায়। আর এই কোড ব্যবহার করলে প্রতিকেজিতে শুল্ক দিতে হবে ২ দশমিক ১৩ ডলার। আগে এই কোডে শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা পণ্য খালাস করা হতো। কিন্তু এখন বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা পণ্যও ওই কোডে খালাস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অথচ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্ভারে দেখা গেছে, এসআরও বা রেয়াতি সুবিধাপ্রাপ্তি সাপেক্ষে যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান ২ইএইচ অকটানল আমদানি করবেন, কেবল তারাই প্রতিকেজিতে ২ ডলার ১৩ সেন্ট মূল্যে শুল্ক পরিশোধ করবেন। কিন্তু রেয়াতি সুবিধা না পাওয়া যেসব আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব আমদানি করবে তারা ৯০ সেন্ট ডলার মূল্যে প্রতিকেজি পণ্য খালাস করবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার বরাবরে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জাহান ট্রেডার্স দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা এইচএস কোড ২৯০৫.১৬.১০, যার ডাটাবেজ মূল্য প্রতিকেজি ২ দশমিক ১৩ মার্কিন ডলার। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা পণ্যের ওপর রেয়াতি সুবিধা পায়। তাছাড়া বিষয়োক্ত পণ্য শুল্ক পরিশোধ করে ১৭ শতাংশ, যেহেতু তারা রেয়াতি হারে ভ্যাট ১৫ শতাংশ ও অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স ৫ শতাংশ মওকুফ পায়। কিন্তু আমরা বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা সেক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত। আমাদের শুল্ককর সিডি ১০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স ৫ শতাংশ, এটি ৫ শতাংশসহ ৩৭ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়।
সম্প্রতি ২-ইএইচ অকটানল ঘোষণায় রাসায়নিক ও বিপজ্জনক পণ্য চালানটি থাইওয়ান থেকে আমদানি করে ঢাকার বংশালের ‘জাহান ট্রেডার্স’। গত ১ আগস্ট চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ‘মাইমুনা শিপিং’। জাহান ট্রেডার্স স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে ওই পণ্য চালান আমদানি করে এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে খালাসের জন্য কাগজপত্র দাখিল করে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এতে আপত্তি জানিয়ে আটকে দেয় চালানটি।
এই বিষয়ে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান মাইমুনা শিপিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. জাবেদ চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম মেনেই আমরা পণ্য চালানটি খালাস করতে কাগজপত্র দাখিল করেছি। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস আমাদের ওপর অন্য আরেকটি এইচএস কোড চাপিয়ে দেয়। ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। আমাদের দেওয়া এইচএস কোডে স্পষ্টই বলা আছে ,আমরা প্রতিকেজিতে ৯০ সেন্ট শুল্ক পরিশোধে চালান খালাস করতে পারবো। কিন্তু তা মানছে না কাস্টমস। আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে প্রতিকেজিতে ২ দশমিক ১৩ ডলার শুল্ক দেওয়ার জন্য। এখন পণ্য আমাদানিকারক নিরুপায় হয়ে গেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত তারা হয়রানির শিকার হচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমসে।’
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২-ইথিলহ্যাক্সনল (২ইএইচ) অকটানল নামের পণ্য চালানের জন্য শুল্ককর কত পরিশোধ করতে হবে আমাদনিকারকদের তা আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি। যেহেতু এই একই এইচএস কোডে দেশের অন্যান্য কাস্টমস হাউসেও শুল্ককর আদায় হয়। তাই আমরা ওটাই নির্ধারণ করে দিয়েছি। সুতরাং ওই এইচএস কোডে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এটা সব আমদানিকারকের জন্যই প্রযোজ্য। সুতরাং এখানে হয়রানির কোনো প্রশ্নই আসে না।’
ডিজে