চট্টগ্রাম কারাগারে বিলাসে কাটছে ওসি প্রদীপের দিন, আপাতত কারও দেখা করা মানা

টেকনাফ থানার বহিস্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সাথে কারাগারে আইনজীবী এবং পরিবারের কোনো সদস্য আপাতত আর দেখা করতে পারবেন না। কারা কর্তৃপক্ষের সুপারিশের আলোকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।

সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ডিআইজি প্রিজনের রেফারেন্সে কারা কর্তৃপক্ষের একটি চিঠি আদালতে পৌঁছলে আদালত কারাবিধি অনুসরণ করে ওসি প্রদীপের সাথে তার আত্মীয়স্বজন এবং আইনজীবী কাউকে দেখা করতে নিষেধ করে আদেশ জারি করেন।

প্রদীপ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় শুনানির জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। সেখানে ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এই সাবেক ওসি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পিপি কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, করোনার কারণে সাবেক ওসি প্রদীপ দাশের সঙ্গে কোনো আইনজীবী এবং আত্মীয়স্বজন অন্য সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে সাক্ষাৎ করার নিয়ম ছিল, তা আপাতত বন্ধ রাখার জন্য চিঠি পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। ওই চিঠি আদালতে উপস্থাপন করা হলে মহানগর দায়রা জজ আদালত কারাবিধি অনুসরণ করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আদেশ দেন।

এডভোকেট লাভলু বলেন, পুলিশ থেকে বহিস্কৃত প্রদীপ কক্সবাজার কারাগারে থাকা অবস্থায় ডিভিশন নিশ্চিত করেছিলেন। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে ডিভিশন পাচ্ছেন।

দুদকের দায়ের করা মামলায় শুনানির জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে প্রদীপ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত ২৩ আগস্ট সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যা মামলায় আটক ও বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছিল দুদক।

এর মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ওসি প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদক অভিযোগ এনেছে। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করার অভিযোগও আনা হয়েছে চুমকির বিরুদ্ধে।

২০ সেপ্টেম্বর আদালতে দুদকের আইনজীবীরা স্ত্রীর নামে স্থানান্তর করা প্রদীপের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে সেই আবেদন গ্রহণ করে তার স্ত্রীর সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দেন। সম্পদ ক্রোকের আবেদনে উল্লেখ করা হয় চুমকি অবৈধ সম্পদ হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন।

প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে স্ত্রীর নামে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন বলেও দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন এবং এজাহারে বলা হয়েছে। দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। ঘটনাস্থল বিবেচনায় মামলাটি করা হয়েছে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এ। মামলা নম্বর ১১।

উল্লেখ্য, প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তার নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারন সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন।

দুদক মামলা দায়েরের পর থেকেই প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ পলাতক রয়েছেন। এর আগে এই মামলায় প্রদীপকে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করা হলে আদালত শ্যোন এরেস্ট দেখানোর আদেশ দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

পুলিশের ওসি পদে দায়িত্ব পালনকালে চাঁদা না পেয়ে নিরীহ ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের প্রদীপের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশ কিছু মামলাও দায়ের হয়েছে।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!