চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের রাতের ডাক্তার কারারক্ষী, ১৬ ওয়ার্ডের ৮টিই বন্ধ
নেই আবাসিক কর্মকর্তা, তিন ডাক্তার বিকেলের পর ব্যস্ত ব্যক্তিগত চেম্বারে
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাতে ডাক্তার না থাকায় অসুস্থ বন্দিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ডাক্তারের বদলে রাতে বন্দিদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন এক কারারক্ষী ও দুই নার্স। কয়েকদিন আগে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পর থেকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্দিদের। এছাড়া ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র ৮টি। অপর তিন মেডিকেল কর্মকর্তা শুধুমাত্র আউটডোরে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। রাতে শুধুমাত্র প্রয়োজন হলেই তারা বন্দি রোগীদের দেখতে আসেন।
তাবে কারাগার কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দায়িত্বরত তিন জন মেডিকেল কর্মকর্তারা ঠিকমতো রোস্টার ডিউটি পালন করেন না। বিকেলের পর সবাই ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখেন। ফলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্ট্রোক ও হৃদরোগীদের অবস্থা অনেক সময় খারাপ হয়ে যায়। কারা হাসপাতালে শুরুতেই জরুরি চিকিৎসা না পাওয়ার কারণেই এমনটা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা হাসপাতাল ১০০ শয্যার। কিন্তু এখানকার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে চালু আছে ৮টি ওয়ার্ড। বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ৩০ জন, এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ৪ জন।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৩ হাজার ৭০০ জন বন্দি রয়েছে কারাগারে। এদের জন্য সহকারী সার্জন পদমর্যাদার এক ডাক্তারসহ চার ডাক্তার থাকার কথা। কিন্তু অক্টোবরে সহকারী সার্জন পদমর্যাদার আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রেজা মো. সরোয়ার আকবর বদলি হলে রাতে রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে বিড়ম্বনা বাড়তে থাকে। প্রেষণ আদেশ প্রত্যাহার করে কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন হিসেবে তাকে পদায়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে অপর তিন মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. তুষার কান্তি নাথ, ডা. একরাম হোসেন ও ডা. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী আউটডোরে সেবা দেন এবং জরুরি প্রয়োজন হলেই রাতে এসে রোগী দেখেন।
আরও জানা গেছে, রাতে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা না থাকায় বন্দি রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন কারারক্ষী (প্যাথলজি) শহীদ সরোয়ার। তিনি ল্যাব টেকনিশিয়ান হওয়ায় হাসপাতালের ল্যাবের দায়িত্বে আছেন। রাতে তার সঙ্গী হিসেবে থাকেন ডিপ্লোমা নার্স লিটন তালুকদারসহ অপর এক নার্স। সরোয়ার ২০১৮ সালের আগে কুমিল্লা কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে তাকে ঢাকা সেনানিবাসে প্যাথলজির ওপরে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করতে পাঠানো হয়। এরপর তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে যোগ দেন। রাতে কেউ অসুস্থ হলে সরোয়ার নিজেই চিকিৎসা দেন। এমনকি রোগীর রুটিন টেস্ট রিপোর্টে ডাক্তারের স্বাক্ষর ছাড়া সরোয়ার নিজেই স্বাক্ষর দিয়ে থাকেন। রাতে ডিপ্লোমা নার্স লিটন তালুকদারের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তিনি নিয়মিত আসেন না। এছাড়া অপর এক নার্সও রাতে থাকেন কালে-ভদ্রে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সরোয়ার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাতে কোনো বন্দি অসুস্থ হলে আমাকে খবর দেওয়া হয়। আমি এসে চিকিৎসা দিই। রুটিন টেস্টগুলোও করে থাকি। গুরুতর রোগী হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া ফোনে তুষার স্যার, একরাম স্যারকেও ডেকে আনা হয়।’
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগ পর্যন্ত ৪০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন হাসপাতালে। আমি নিয়মিত ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট, সিবিসি পরীক্ষা করে চিকিৎসা দিয়েছি। বর্তমানে ৪ জন ডেঙ্গু রোগী আছে। তাদের চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টের তদারিক আমি করছি।’
কারাগারের চিকিৎসক ডা. তুষার বলেন, ‘আমরা মূলত আউটডোর বেসিসে রোগীদের সেবা দিই। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। রাতে কোনো বন্দি অসুস্থ হলে, চিকিৎসাধীন কোনো বন্দির পরামর্শের প্রয়োজন হলে আমরা অনকলে আসি। রাতে ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেন শহীদ সরোয়ার নামে এক কারারক্ষী ও ডিপ্লোমা নার্সসহ দু’জন নার্স।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা পদটি শূন্য হওয়ায় তা পূরণে কারা অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আমরা বর্তমান লোকবল দিয়ে বন্দি রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
ডিজে