চট্টগ্রাম কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করতে গিয়ে এবার খোদ কারা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিদর্শক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (২২ আগস্ট) কমিশনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দুদকের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানকে এ অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করা সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎ, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সৈয়দ ইফতেখারের বিরুদ্ধে অধীনস্ত ও আশীর্বাদপুষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে নিয়োগ, টেন্ডার ও মাদক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে।
এর আগে চট্টগ্রাম কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে সাবেক এই কারা প্রধানকে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই সময় চট্টগ্রাম কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারাকে ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে স্বীকার করে সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘সংস্থার প্রধান হিসেবে আমি দায় এড়াতে পারি না। এটা আমার প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলা যেতে পারে।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্বরত ছিলেন— এ দুজন কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে।
২০১৯ সালের ২৮ জুলাই চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক ডিআইজি-প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিকের ঢাকার ভূতের গলির বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুদক। ওই সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ নেওয়ার এবং সেই অর্থ পাচারের অভিযোগ করা হয়।
দুদক কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে পার্থের ফ্ল্যাটের ওয়াল কেবিনেটে হলুদ গেঞ্জিতে মোড়ানো ছিল ৫০ লাখ টাকা। আর ৩০ লাখ টাকা পাওয়া যায় একটি স্কুল ব্যাগের ভেতরে।
তবে পার্থ গোপাল বণিক সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এই ৮০ লাখ টাকা তার ‘বৈধ আয়’ থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তার শাশুড়ি দিয়েছেন, আর বাকি ৫০ লাখ টাকা তার ‘সারা জীবনের জমানো’ টাকা।
পার্থ সেদিন দাবি করেন, ফ্ল্যাটের নিচে থাকা তার ব্যবহারের গাড়িটির মালিকও তিনি নন, তার বন্ধুর গাড়ি তিনি ব্যবহার করেন। আর যে ফ্ল্যাটে থাকেন, তাও তার শাশুড়ির।
তারও আগে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ভৈরবে একটি ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। তার কাছে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিল পাওয়া যায়।
ওই সময় তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব অনিয়ম দুর্নীতির ‘অংশীদার’ হিসেবে চট্টগ্রাম কারাগারের তখনকার ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন।
সিপি