চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের শুঁটকিতে মৃত্যুঝুঁকির ই কোলাই ব্যাকটেরিয়া
বাদাম ও ভুট্টার নমুনায় ক্যানসার সৃষ্টির উপাদান
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের লইট্টা শুঁটকিতে ক্ষতিকর ই কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে। পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলে চাল, বাদাম ও ভুট্টার ৬০টি নমুনার মধ্যে ৯টিতে লিভার ক্যানসারের জন্য দায়ী বিষাক্ত অ্যাফ্লাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এদিকে ময়মনসিংহে সালাদ তৈরির সবজি ও দুগ্ধজাত খাবারে মিলেছে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস নামক রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া।
নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে অরেঞ্জ নলেজ প্রোগ্রামের অধীনে পাঁচটি পৃথক গবেষণায় এসব ফলাফল উঠে এসেছে। ২০২১ সালজুড়ে গবেষণাগুলো পরিচালিত হয়। শনিবার (২১ মে) রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে আয়োজিত একটি কর্মশালায় এসব ফলাফল তুলে ধরা হয়।
নেদারল্যান্ডস সরকারের ‘বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা জোরদারকরণে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভিইটি) ও উচ্চশিক্ষা প্রকল্প’ এ কর্মশালার আয়োজক।
গবেষণায় ক্ষতিকর ই কোলাই ব্যাকটেরিয়া খুঁজতে মূলত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের অঞ্চলের কাঁচা লইট্টা, আধা ও পুরোপুরি শুকনো লইট্টা শুঁটকি পরীক্ষা করা হয়। সেখানে শতভাগ লইট্টার নমুনাতেই এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। গবেষণা অনুসারে ৪৫টি নমুনার ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ সৃষ্টিকারী এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। আর ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক সহনশীল ই কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক গবেষক মো. শাহেদ রেজা বলেন, শুঁটকি ধোয়ার পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকলে, শুঁটকি ভালো করে না শুকানো হলো ও বেশি তাপমাত্রায় রান্না না করলে তা পেটে গেলে শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের স্থান, গুদাম, শুঁটকির বস্তায়ও এ ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়াটি পাওয়া গেছে। কিছু অঞ্চলে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় লইট্টা সেদ্ধ করা হয় না, তাই সেখানে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি।
অন্যদিকে, খাদ্যশস্যে যকৃত ক্যানসারের জন্য দায়ী অ্যাফ্লাটক্সিন নামক উপাদানের উপস্থিতি নিয়ে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম চৌধুরী। গবেষণায় আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাল, বাদাম, আটা, মসুর ডাল, মুগ ডাল, ভুট্টা ও সরিষায় বিষাক্ত অ্যাফ্লাটক্সিনের পরীক্ষা করা হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ঈশ্বরদী, নাটোর, বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ের গুদাম ও পাইকারি বাজার থেকে ৬০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণা অনুসারে, সংগৃহীত নমুনার ৯টিতে অ্যাফ্লাটক্সিন পাওয়া গেছে। এসবের চারটিতে ছিল নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি উপস্থিতি। মূলত বাদাম ও ভুট্টাতেই এর উপস্থিতি বেশি। আর চালের একটি নমুনায় তা পাওয়া গেছে। গবেষক তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অ্যাফ্লাটক্সিন আদর্শসীমার মধ্যে থাকলে তা তেমন ক্ষতিকর নয়। মাত্রাতিরিক্ত হলে তা ক্যানসার, কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
সালাদ তৈরির সবজি ও দুগ্ধজাত খাবারে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিয়ে আরেকটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. তৌহিদুল ইসলাম। গবেষণায় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, সদর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় শসা, টমেটো, গাজরের ৮৫টি ও দুগ্ধজাত পণ্য আইসক্রিম, দই ও পনিরের ৮৩টি নমুনা ব্যবহৃত হয়।
গবেষণায় নমুনার ১৯ দশমিক ২ শতাংশ শসা, ১০ শতাংশ টমেটো ও ৩ দশমিক ৪ শতাংশ গাজরে এ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে ৭ দশমিক ১ শতাংশ আইসক্রিমে ও ৪ শতাংশ দইয়ে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।