চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে আবারও লবণ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি লিটার পানিতে ৪০ থেকে ২১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বাজেট হলেও খাবার পানি লবণমুক্ত করতে কোনও ধরনের বাজেট রাখা হয়নি। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর।
পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। গত বছরও একই সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল নগরবাসীকে। তখন মানুষের শারীরিক জটিলতাও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
জানা গেছে, কাপ্তাই লেকে পানি কমে যাওয়া ওয়াসার পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির আরেক উৎস হালদা নদীতেও কমেছে পানির প্রবাহ। হালদার উৎপত্তিস্থলের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য দেওয়া বাঁধের কারণে হালদায় পানিপ্রবাহ কমে গেছে। যে কারণে হালদার পানিতেও বেড়েছে লবণাক্ততা। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে লেকের পানি কর্ণফুলীতে ছাড়া হয়। যে পাঁচটি ইউনিট দিয়ে পানি ছাড়া হয় তার মধ্যে চারটি বন্ধ। এ কারণে কর্ণফুলীতে মিঠাপানির সংকট তৈরি হয়েছে।
এদিকে কাপ্তাই লেকে স্বাভাবিক অবস্থায় সর্বোচ্চ ১০৯ ফুট পানি থাকে। চলতি মার্চে পানি থাকার কথা ৯২ দশমিক ৬৮ ফুট। কিন্তু বর্তমানে পানি আছে ৮৩ দশমিক ৬১ ফুট। পানি কম থাকায় জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। এতে বঙ্গোপসাগরের লবণ-পানি জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদায় প্রবেশ করছে। হালদা নদীতে লবণ-পানির কারণে ওয়াসার দুটি প্রকল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ওয়াসার এ দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উৎপাদন হয় দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু হালদা নদীতে লবণ ও কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর কমে যাওয়ায় বর্তমানে পানি উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক প্রায় ৪৮ কোটি লিটার। এছাড়া মোহরা ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে উৎপাদিত পানিতে লবণের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে আগামীতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘এবার গ্রীষ্ম মৌসুমের আগেই শহরের কিছু এলাকায় লবণাক্ত পানি পাচ্ছেন গ্রাহকরা। গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতি লিটার পানিতে সর্বনিম্ন ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ২১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত বছরও গ্রাহকরা একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখন খরচের ভয়ে রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ার বদলে এক নদীর পানি অন্য নদীতে ব্লেন্ডিং করে নগরবাসীকে সরবরাহ করেছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ অবস্থায় জোয়ারের সময় মোহরা পানি শোধনাগার ও মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে ৫ ঘণ্টা পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তাতে ওয়াসার পানি উৎপাদন কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ ও ২-এর উৎপাদনও কিছুটা কমেছে। সংকট কাটাতে রেশনিংয়ের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী আরও বলেন, খাবার পানি লবণমুক্ত করতে রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ায় শতভাগ লবণমুক্ত করতে হয়। কিন্তু তাতে খরচ বেশি। প্রতি লিটার পানি রিভার্স অসমোসিস করতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা খরচ পড়ে। এই খরচ বহন করা ওয়াসার জন্য দুরুহ। তবে ব্লেন্ডিং প্রক্রিয়ায় পানি উৎপাদনে খরচ পড়ে ২৫ থেকে ২৬ টাকা।
লবণ পানি খাওয়ার বিষয়ে কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রদীপ দত্ত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কিডনি রোগীদের লবণ পরিহার করতে বলা হয়। কিন্তু সেই রোগী যদি প্রতিদিন ৩ লিটার পানি পান করেন, তাহলে তার শরীরে মাত্রাতিরিক্ত লবণের যোগান হচ্ছে। ফলে যারা কিডনি উপসর্গে ছিলেন, তারাও পুরোপুরি কিডনি রোগী হয়ে যাচ্ছেন।’
ডিজে