চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা শুরু হয় ২৫ মার্চ। আর প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় এর ঠিক ১০ দিন পর— ৩ এপ্রিল। একমাস পর ৪ মে চট্টগ্রামে মোট করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৯ জনে। এরপর মাত্র ৮ দিনে চট্টগ্রামে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় শনাক্ত হওয়া মোট করোনা পজিটিভ রোগী ৪১১ জন। গত ৮ দিনে শনাক্ত হয়েছেন ৩৩২ জন। এই চিত্রটি বলে দিচ্ছে চট্টগ্রামে কতটা ব্যাপক আকারে রূপ নিয়েছে করোনার সংক্রমণ।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস বিস্তারের এই ভয়াবহ চিত্রের পেছনে দুটি কারণকে প্রধান বলে মনে করেছে সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত দুটি কারণে করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছি আমরা। এর মধ্যে প্রথম কারণটি হচ্ছে আমরা টেস্টের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বাড়িয়েছি। তিনটি ল্যাবে এখন আমরা ৩০০ থেকে ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করতে পারছি। তাছাড়া গত কিছুদিন ধরে সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রবণতা বেড়েছে সবার মধ্যে। কাজেই সংক্রমণ কিছুটা ছড়িয়েছে এটাও ঠিক।’
এদিকে চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে সিট আছে সবমিলিয়ে ২২০টি। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যা মোটে ১০টি। সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০০ সিটের আইসোলেশন ও ১০ সিটের আইসিইউ ওয়ার্ড, ফৌজদারহাটের বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডিতে ৩০ সিটের আইসোলেশন ওয়ার্ড ছাড়াও একই এলাকায় অবস্থিত ফিল্ড হাসপাতালে ৫০ সিট ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ সিটের অবজারভেশন ওয়ার্ড আপাতত ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য।
এ পর্যন্ত করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া ৪১১ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৯ জন আর মারা গেছেন ২৩ জন। বাকি ৩০৯ জন এখনো করোনা পজিটিভ।
চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে ২২০ সিটের বিপরীতে ৩০৯ জন আক্রান্তের এই ধাক্কা সামাল দিতে দৃশ্যমান উপসর্গ না থাকলে রোগীকে বাড়িতে আইসোলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রামের তিন হাসপাতালে ৯৪ জন আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
চট্টগ্রামে যেভাবে করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে, এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে কী ভাবছেন— এই প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমাদের শনাক্ত বেশি হচ্ছে এটা ঠিক। তবে এদের বেশিরভাগের আবার দৃশ্যমান উপসর্গ নেই বা মৃদু উপসর্গ আছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী মৃদু উপসর্গ থাকা করোনা পজিটিভ রোগীরা বাসাতে থেকেই চিকিৎসা নেবেন। চট্টগ্রামে এর মধ্যে তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে করোনা রোগীদের। এর বাইরে চমেকে ৩০ সিটের একটা অবজারভেশন ওয়ার্ড আছে। ওটাকে ১০০ সিটের আইসোলেশন ওয়ার্ড করার কথা ভাবছে চমেক কর্তৃপক্ষ। হলিক্রিসেন্ট প্রস্তুত হচ্ছে। এরপরও যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো ব্যবহার করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছিলাম। এখনও সেই কথাই বলবো। সবচেয়ে জরুরি হলো এটাই। চট্টগ্রামে শুরুতে একটা ল্যাব ছিল। এখন তিনটি ল্যাব হয়েছে। হাসপাতাল আর শয্যাও বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সক্ষমতা বাড়ানোর। তবে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলায় জোর দেওয়া।’
সিপি