চট্টগ্রামের আনোয়ারায় রাষ্ট্রায়ত্ত চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির (সিইউএফএল) বর্জ্যমিশ্রিত বিষাক্ত পানি পানে একের পর এক গবাদিপশু মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সিইউএফএল কারখানা কর্তৃপক্ষ বারবার যুক্তি দেখাচ্ছে, তাদের কারখানা বন্ধ রয়েছে। তাই বর্জ্য বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারা উল্টো অভিযোগের তীর ছুঁড়ছে ডিপিইও পাওয়ার প্ল্যান্ট, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো), ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল) ও ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের দিকে।
কেউ দায় না নিলেও মৃত গবাদিপশুগুলোর পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন বলছে ‘বিষাক্ত বর্জ্যে’ সর্বশেষ শুক্রবার (১০ মার্চ) ১২টি গরু-মহিষের মৃত্যু ঘটে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাই বলুক না কেন, স্থানীয়দের বিক্ষোভ মিছিল থেকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই সিইউএফএল এর বর্জ্য মিশ্রিত বিষাক্ত পানি পানে মহিষগুলো মারা গেছে।’ তাদের যুক্তি, কারখানার পশ্চিমে গোবাদিয়া খাল এলাকাতেই এ ঘটনা ঘটে।
অতীত তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল দুপুরে আনোয়ারায় বিষাক্ত বর্জ্যমিশ্রিত পানি খেয়ে ১৩ মহিষের মৃত্যু ঘটে। ২০২১ সালের ৬ মে নির্গত গ্যাসের বর্জ্যর পানি খেয়ে ৮টি মহিষের মৃত্যু ঘটে। গত বছরের ১৪ এপ্রিল বিকেলে মাঝিরচরে ১২টি মহিষ বর্জ্য মেশানো দূষিত পানি পান করে মারা যায়। এর আগেও কারখানার বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস ছাড়ার কারণে ২টি গরুর মৃত্যু ঘটে। এভাবে একের পর এক মরছে গবাদিপশু।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মোহাম্মদ ইছহাক ও নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির (সিইউএফএল) নির্গত গ্যাসের বর্জ্য গোবাদিয়া খালে প্রবেশ করায় বিষাক্ত হয়ে পড়েছে খালের পানি। বিভিন্ন সময়ে এ খালের পানি খেয়ে গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। খালের আশপাশে স্থানীয়দের গরু-ছাগল ও মহিষ বিচরণকেন্দ্র। ফলে খালের পানি পান করলেই গবাদিপশু গুলো মারা যাচ্ছে বারবার ।’
কিন্তু চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজারের (সিইউএফএল) ল্য্যবরেটেরি কর্মকর্তারা স্থানীয়দের চাপের মুখে খালের পানির নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পোস্টমর্টেম ইত্যাদি কিছু কথায় ভুলিয়ে রেখে ‘প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেবো’ বলে কৌশলে সময়ক্ষেপণ করে আসছেন।
বারশত ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির (সিইউএফএল) নির্গত গ্যাসের বিষাক্ত বর্জ্য গোবাদিয়া খালে ফেলে। সে খালের পানি গবাদিপশু পান করলে ঘটে মৃত্যুর ঘটনা। একের পর এক মহিষ মারা গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।’
বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএ কাইয়ুম শাহ বলেন, ‘সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে এর আগেও বেশ কয়েকবার বিষাক্ত পানির কারণে অনেক গরু–মহিষ মারা গেছে। স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেই। কারখানা কর্তৃপক্ষ এসব কর্ণপাত করছে না। এবারও গরু–গহিষ মারা যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। ক্ষতিপূরণ দেবে বলেছে ডিএপি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।’
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মিজানুর রহমান জানান, ‘সিইউএফএল গত চার মাস ধরে বন্ধ। কারখানা এখন উৎপাদনে নেই। যেহেতু কাজ চলছে না, বর্জ্য কিভাবে বের হবে? এখন তো কোনো কারণে গরু-মহিষ মারা গেলেও সিইউএফএলের দিকে আঙ্গুল তুলছে সবাই। অথচ আশেপাশে ডিপিইও পাওয়ার প্ল্যান্ট, কাফকো, ডিএপিএফসিএল ও ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। এসব কারখানা থেকেও তো বিষাক্ত পানি বের হতে পারে— যা নদী গিয়ে পড়ছে।’
ডিএপি সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল জানান, ‘আমাদের কারখানা থেকে যে পানি বের হয় তাতে পশুর মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই। তারপরও মৃত পশুগুলো পোস্টমর্টেম করে দেখে তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সিপি