চট্টগ্রামে ১৪ ডাক্তারের গবেষণা, জ্বর-শ্বাসকষ্টেই বেশিরভাগ করোনারোগীর মৃত্যু

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগেই মারা যাচ্ছেন বেশিরভাগ রোগী। এছাড়া হাসপাতালে নিতে দেরী হওয়ার কারণেও মারা যাচ্ছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী। করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের নিয়ে এক গবেষণা শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন গবেষকরা।

চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ১৪ জন চিকিৎসকের একটি গবেষক দল ‘ভারবাল ওটোপসি অব ডেথস অ্যামাং কনফার্মড কোভিড-নাইনটিন কেইসেস’ শীর্ষক এ গবেষণা কার্যক্রমটি সম্পন্ন করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ জয় এ গবেষণা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন।

গত বছরের (২০২০ সালের) এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া ২২২ জন রোগীর পরিবারকে এ গবেষণার আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৭৭, কুমিল্লার ৯৬ ও কক্সবাজারের ৪৯ রোগীর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন গবেষকরা। তথ্য সংগ্রহকালীন মৃত্যুর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় রোগীর পরিবারের সদস্যদের কাছে।

গবেষণায় জানা গেছে এই ২২২ জনের মধ্যে ৮১ শতাংশেরই (১৮০ জন) জ্বর ছিল। শ্বাসকষ্টের জটিলতা ছিল ৭৫ শতাংশের (১৬৬ জন)। কাঁশি ছিল ৫৫ শতাংশের (১২২ জন)। আগে থেকেই ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন ৪৯ শতাংশ (১০৯ জন)। উচ্চ রক্ত চাপ ছিল ৩২.৪ শতাংশের (৭২ জন)। ৭৮ শতাংশ (১৭৩ জন) রোগী অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। মৃতদের ৪৯ শতাংশ (১০৯ জন) এজিথ্রোমাইসিন এবং ৪৭.৩ শতাংশ (১০৫ জন) ইনজেক্টেবল এন্টিবায়োটিক পায়। রক্ত পাতলা করার জন্য হেপারিন জাতীয় ওষুধ পায় ৩০.৩ শতাংশ (৬৭ জন)। ২৪ জন (১১ শতাংশ) রোগী হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন পায়। বাসায় চিকিৎসা নেয়ার কারণে কোন অক্সিজেন পায়নি ১৯.৪ শতাংশ (৪৩ জন) রোগী।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য বলে জানান গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া চমেক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ জয়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত এসব রোগীর মৃত্যুর পিছনে গবেষণায় বেশ কিছু কারণ উঠে এসেছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত কোভিড চিকিৎসা ও রোগীর মৃত্যুর হার কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ।

গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত অন্যান্য চিকিৎসকরা হলেন- কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ বেলালুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এনশাদ একরাম উল্লাহ, সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. রবিউল আলম, সহকারী অধ্যাপক ডা. মির্জা নুরুল করিম, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল ট্রফিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান, চমেকের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মেরিনা আর্জুমান্ড, আইসিইউ বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আব্দুর রহমান চৌধুরী, চমেকের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ডা. গালিব বিন মোস্তফা, ডা. অর্পি দাশ ও ডা. অরিন্দম সিং পুলক।

গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- মৃত ২২২ রোগীর মাঝে পুরুষের সংখ্যা ১৬৬ জন। যা প্রায় ৭৫ শতাংশ। বাকি ২৫ শতাংশ নারী। মৃত ১৪০ জনের বয়স ৫০ বছরের উর্ধ্বে। যা মোট মৃত্যুর ৬৩ শতাংশ।

গত বছরের ডিসেম্বরে এ গবেষণা কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ শেষ হয় বলে জানান গবেষক দলের সদস্য চমেক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রবিউল আলম। গত ২৫ জুন ইন্টারেকটিভ প্রফেশনাল ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (আইপিডিআই) কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক একটি অনলাইন সেমিনারে এ গবেষণা পত্রটি উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে ‘ভারবাল ওটোপসি অব কনফার্ম কোভিড নাইনটিন ডেথ’ শীর্ষক এ প্রবন্ধটি সেরা প্রবন্ধ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বলে জানান ডা. রবিউল আলম।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!