চট্টগ্রামে ১৩২ বছরে এই প্রথম স্থগিত আইনজীবীদের ভোট

ভীতির মুখে নির্বাচন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। নির্বাচনের ৬ দিন আগে পদত্যাগ করেছেন আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা, ভয়ভীতি হুমকির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। পদত্যাগের এমন নজিরবিহীন ঘটনার পর আগামী অন্তত দুই মাসের আগে নির্বাচন সম্ভব নয় বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রামে ১৩২ বছরে এই প্রথম স্থগিত আইনজীবীদের ভোট 1

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের দাবি, আওয়ামীপন্থী প্রার্থীদের কাছ থেকে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে গেছে। এজন্য আমরা তাদের মনোনয়ন বাতিলের আবেদন করি। তবে আওয়ামীপন্থি প্যানেলের দাবি উড়িয়ে দিয়ে ‘রশিদ-জাবেদ-মাহতাব পরিষদ’ নিজেদের ‘স্বতন্ত্র প্যানেল’ বলে দাবি করেছে।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়ে পদত্যাগের বিষয়টি জানান নির্বাচনী কর্মকর্তারা। চিঠিতে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সোলায়মান, নির্বাচনী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দত্ত, তারিক আহমদ, সাম্যশ্রী বড়ুয়া এবং মো. নুরুদ্দিন আরিফ চোধুরীর স্বাক্ষর রয়েছে।

পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ জানুয়ারি সমিতির গঠনতন্ত্রের বিধানমতে সমিতির নির্বাচনে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের মনোনীত করা হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী কর্মকর্তারা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত এবং ব্যালট পেপার ছাপানোসহ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূলে না থাকা সত্ত্বেও আমরা অত্যন্ত আশাবাদী এবং উৎসাহ নিয়ে আমাদের অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলাম।

পদত্যাগপত্রে আরও বলা হয়, আজ (মঙ্গলবার) আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগের প্রস্তাব করে একটি দরখাস্ত দেয়। অপরদিকে ঐক্য পরিষদ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনয়ন বাতিলের জন্য আবেদন করেন। দুটি আবেদনই সমিতির গঠনতন্ত্র বর্হিভূত। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন চায় না সমিতির কোন সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হেনস্তার শিকার হোন। উভয়পক্ষের পারস্পরিক অবস্থান নির্বাচনের প্রতিকূলে হওয়ায় এবং নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে হেনস্তা, ভয়ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এমতাবস্থায়, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন করার কোনো সুযোগ বা পরিবেশ না থাকায় নির্বাচন কমিশন সর্বসম্মতভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে অপরাগতা প্রকাশ করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

চট্টগ্রাম আদালতের কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে ৩২টি নির্বাচন হয়েছে। এখন পর্যন্ত সবগুলো নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে হয়েছে। শুধুমাত্র এবারই দলীয় দ্বন্দ্বের কারণে নির্বাচন পণ্ড হয়েছে। চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব-বিভেদ ১৩২ বছরের ইতিহাসে নেই।

আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দাবি-দাওয়ার মুখে পদত্যাগ করেছেন সবাই। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি আমাদের সমিতির নির্বাচন হচ্ছে না। যার জন্য এ নির্বাচন পণ্ড হয়ে গেছে। এখন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ১১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ সভা ডাকা হবে। সেখানে অ্যাডহক কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নতুন করে নির্বাচন করতে হলে ৬০ দিন বা ২ মাস আগে সম্ভব নয়।’

পদত্যাগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘আমি চিঠিতে পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করেছি। চিঠিটা সংগ্রহ করে পড়ে নিন, পদত্যাগের কারণ জানতে পারবেন।’

বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী হওয়া আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীদের কাছ থেকে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে হুমকি গিয়েছে। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছে, এসবের জেরে মনোয়ন বাতিলের জন্য আবেদন করা হয়। আমাদের প্রার্থীদের কোনো যোগসূত্র নেই। তাদের দ্বন্দ্বের জেরে নির্বাচন হচ্ছে না।

অন্যদিকে ‘রশিদ-জাবেদ-মাহতাব পরিষদ’ থেকে সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল রশিদ নিজেদের স্বতন্ত্র প্যানেল দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবগুলো নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে হয়েছে। এবারই বহিরাগতরা মিছিল-মিটিং করেছে। নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের ঘটনা সমিতির এবারই প্রথম। নির্বাচনের পেছনে আমাদের শ্রম সময় অর্থ সবই বৃথা। দলীয় দ্বন্দ্বের জেরে এখন নির্বাচন হচ্ছে না।’

এবারের নির্বাচনে ২১টি পদে ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা ছিল মোট ৫ হাজার ৪০৪ আইনজীবীর।

এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা।

আরএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm