চট্টগ্রামে হয়ে গেল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইন

সরকারি চাকরির পেছনে তারুণ্যের একরোখা আগ্রহ বেকারত্বের হার বৃদ্ধি বলে মনে করেন নাগরিক সমাজ। সরকারি চাকরি মানে নিশ্চিত জীবন। নেই কোনো জবাবদিহি। চট্টগ্রামের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনে এমনই অভিমত ব্যক্ত করেন।

চট্টগ্রামে হয়ে গেল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইন 1

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে ছিল শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন পর্ব। অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অফ পার্টি আমিনুল এহসান।

চট্টগ্রামে হয়ে গেল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইন 2

এ সময় যুব কর্মসংস্থান: প্রত্যাশা ও সুপারিশ’ শীর্ষক নীতি আলোচনায় ক্লিফটন গ্রুপের পরিচালক ও সিইও এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশে বেকারত্ব কমিয়ে আনতে পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টর দুটো পাশাপাশি চলতে হবে। ব্যালেন্স যদি না হয় তাহলে কোনোদিন কর্মসংস্থান সমস্যা সমাধান হবে না। সরকারকে পলিসি নিতে হবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইনটেনসিভের বিনিময়ে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের দক্ষ করতে অনলাইনে কোর্স করতে পারেন তরুণ প্রজন্ম। বর্তমানে যারা উদ্যোক্তা আছেন অধিকাংশ কোথাও না কোথাও জব করেছেন। এ টু জেড বুঝে জেনে তারপর উদ্যোক্তা হয়েছেন। চাকরির সঞ্চয়ের অর্থ ও ব্যাংক লোন নিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সনাতনী। ডিগ্রি পাস করে তাড়াতাড়ি চাকরিবাজারে চলে যায়। কিন্তু তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। চাকরির বাজার সব সময়ই অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেয়। সরকারিভাবে যদি শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং দেওয়া হতো তাহলে চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। শিক্ষার্থীদের দিনে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হবে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে নিজেদের দক্ষ করে তুলতে হবে। তাহলেই সফলতা আসবে।

তিনি আরও বলেন, সবাই সরকারি চাকরির দিকে মুখিয়ে থাকে। কারণ সরকারি চাকরি মানে জমিদারি। কাজে প্রচুর ফাঁকি দেওয়া যায় এবং নিশ্চিত জীবন।কিন্তু বেসরকারি চাকরিতে ৮ ঘণ্টার বেশি কর্মঘণ্টা তারমধ্যে জবাবদিহির মধ্যে থাকতে হয় সব সময়ই। তাই সরকারি চাকরি সবার কাছে কমপোর্টেবল জোন। তরুণরা সরকারি চাকরি পেলে প্রশান্তির জায়গায় চলে যায়।৬০ বছর হলে অবসরজীবন। বেসরকারি চাকরি গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চট্টগ্রাম প্রধান অ্যালেক্সসিউস চিছাম বলেন, বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেকারত্বের হার বেশি। কারণ প্রতি বছর বাংলাদেশে ২২ লাখ জনশক্তি শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে চাকরিবাজারের দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণ করতে পারছে না তরুণ প্রজন্ম। এ চ্যালেঞ্জ নিতে না পেরে যুব সমাজের মধ্যে অসন্তুষ্টি, চাপা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। গ্রাম ও শহরের পড়াশোনা, দেশের ও বিদেশের ডিগ্রির মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে।

তিনি আরও বলেন, তরুণদের উদ্যোক্তা তৈরিতে ঋণের সুব্যবস্থা , ট্রেড লাইসেন্স, ছাড়পত্র ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনতে পারলে বেকারত্বের হার কমবে।

চিটাগং ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ফারহানা যুথী বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন। একজন বেকার শিক্ষার্থী টাকা কোথায় পাবে, লোন কে দেবে এসব রিস্ক নিয়ে থাকে। আমাদের পরিবার সবসময় আশা করে আমরা স্থায়ী চাকরি করব। এ কারণে তরুণরা উদ্যোক্তা রিস্ক নিতে চায় না।

অনুষ্ঠানে নাগরিক সমস্যা নিয়ে আকর্ষণীয় নাটক, কুইজ ও ভিডিও মেসেজ প্রতিযোগিতা এবং ক্যাম্পেইনের রিল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শিত নাটকের ওপর কুইজে জিতেছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অয়ন, তাহসিন, শাহাদাত কবির, কাজী মো. ফারদিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারহানা জ্যোতি, সরকারি সিটি কলেজের মো. হাবিব উল্লাহ, সুমি আকতার, ভলান্টিয়ার বাংলাদেশের সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে ক্যাম্পেইন সম্পর্কে আলোচনা করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার সদরুল আমিন, বিএনসিসি কর্ণফুলী রেজিমেন্টের সাবেক অ্যাডজুটেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ইয়ুথ চিফ এএনএম তামজীদ।

ইউএসএআইডির স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় আলোচনা, নাট্য প্রদর্শনী, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। ক্যাম্পেইনটির আওতায় www.amiojittechai.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে নাগরিকদের দাবি ও মতামত।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm