চট্টগ্রামে হঠাৎ বেড়ে গেছে করোনার হানা, ছোবল হানবে আসছে শীতে

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও চিন্তিত

চট্টগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে ফের বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। গত এক মাস আগেও যেখানে দৈনিক মোট নমুনা পরীক্ষার ৬ থেকে ৮ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছিল, চলতি অক্টোবর মাসে সেটা ইতিমধ্যে ১০ শতাংশের ঘর ছাড়িয়ে গেছে।

গত দুই মাস ধরে নিম্নমুখী করোনা সংক্রমণের গ্রাফ হঠাৎ করেই খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী হওয়াকে বেশ গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে আসছে শীতে ফের করোনার সংক্রমণ বাড়ার যে আলোচনা চলছিল সেটি সত্যি হতে যাচ্ছে বলেই অনুমান করছেন তারা।

গত এক সপ্তাহের করোনা টেস্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) ৭৯ জন শনাক্তের পর শুক্রবার শনাক্ত গিয়ে দাঁড়ায় ১০০ জনে। পরদিন শনিবার শুক্রবারের তুলনায় কম ৯০ জন শনাক্ত হলেও সেটি গত এক মাসের তুলনায় বেশি। সংক্রমণের হার কিছুটা ওঠানামা করলেও সামগ্রিক হিসেবে চট্টগ্রামে ফের করোনার সংক্রমণ বাড়ছে বলেই মত সংশ্লিষ্টদের।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি ঠিক গত মাসের তুলনায় সংক্রমণ কিছুটা বাড়ছে। গত মাসে মোট নমুনা পরীক্ষার ৬ থেকে ৮ পারসেন্ট করোনা শনাক্ত হচ্ছিল। এই মাসে সেটি ৬ থেকে ১০-১১ পার্সেন্ট পর্যন্ত পাচ্ছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘গত মাসের তুলনায় খানিকটা বাড়লেও মাঝে মাঝে আবার কমেও যাচ্ছে, যেমন পরসু ১০ শতাংশ ছিল, কাল সেটা ৬ শতাংশে নামলো পরের দিন আবার ১০ শতাংশ। অর্থাৎ এটা ফ্লাকচুয়েট (ওঠানামা) করছে।’

সিভিল সার্জন বললেন, ‘এখন আমাদের মনে হচ্ছে আসছে শীতে সংক্রমণ কিছুটা হলেও বাড়বে। আগের মত ভয়াবহ না হলেও করোনা শনাক্তের হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে বলে আমরা আশংকা করছি।’

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলে নিশ্চিত করছেন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী। মানুষজনকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গতবারের শিক্ষা যেটা পেয়েছি— অক্সিজেনের বিভিন্ন ফর্মগুলো আমাদের থাকতে হবে। যেমন হাই ফ্লো ন্যাজোল কেনোলা, অক্সিজেন কনস্ট্রেটর, অক্সিজেন প্লান্ট— এগুলো এখন আমাদের যথেষ্ট আছে। আমরা আল্লাহর রহমতে সামলাতে পারবো। তবে জনগণকে আমি সচেতনতা বাড়ানোর অনুরোধ করবো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টা এখন শুধুই একটা দায়সারা কথা হিসেবেই অনেকে নিচ্ছে। এই বিষয়ে সচেতন হওয়ার বিকল্প নাই।’

শীতে করোনা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতির নির্দেশ
এদিকে আসন্ন শীত মৌসুমে করোনা মহামারী আরও মারাত্মক আকার ধারণ করলে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসহ ২২টি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভাগকে আগাম প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা জারি করেছে।

চট্টগ্রামে হঠাৎ বেড়ে গেছে করোনার হানা, ছোবল হানবে আসছে শীতে 1

বুধবার (১৪ অক্টোবর) মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন জেলা প্রশাসন এবং দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নির্দেশনাটি পৌঁছেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন। এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, মাঠ প্রশাসনসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ থেকে আসন্ন শীত মৌসুমে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পর্যালোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে যে, যদি আসন্ন শীতে এই পরিস্থিতির কোনও অবনতি হয় তাহলে তা মোকাবিলার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নিজ নিজ পরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক সমন্বিত করে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm