চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সফরে এস আলমের ছায়া, বিতর্কে সালাম-খলিলসহ আওয়ামী লীগ নেতারা

চট্টগ্রামের পটিয়ায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুর জাহান বেগমের সফর ঘিরে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সফরজুড়ে বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের বেয়াই মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ও এস আলম পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের পাশাপাশি কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও জামায়াত নেতারাও।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) নুর জাহান বেগম পটিয়ার জিরি ইউনিয়নের সাইদাইর এলাকায় ৫০০ শয্যার একটি সাধারণ হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেন। সফরে তার সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ সময় সেখানে যুক্ত হন মীর গ্রুপের আবদুস সালাম, কেডিএস গ্রুপের খলিলুর রহমান, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল হাসেম এবং কেডিএস খলিলের ভাগ্নে ও যুবলীগ নেতা এম ইদ্রিস চৌধুরী অপু।

এর আগে গত ১৬ মার্চ তিনি কুসুমপুরা ইউনিয়নের হরিণখাইন আইডিয়াল হাই স্কুলের পাশের স্থানটিও পরিদর্শন করেছিলেন।

এদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুর জাহান বেগমের সফরে এস আলমের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের বেয়াই মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম এবং এস আলম পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের পাশাপাশি কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতি নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল হাসেম এবং যুবলীগ নেতা ও কেডিএস খলিলের ভাগ্নে এম ইদ্রিচ চৌধুরী অপুকেও দেখা গেছে।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী এই ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে আবার পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এস আলমের বিভিন্ন অপকর্মের তারাও অংশীদার।

গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে চট্টগ্রাম নগরীর কালুরঘাট এলাকায় মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালামের একটি ওয়্যারহাউসে লুকিয়ে রাখা ১৪টি বিলাসবহুল গোপনে সরিয়ে নেওয়া নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। মীর গ্রুপের আবদুস সালামের ফুফাতো ভাই দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ছাড়াও গাড়ি সরানোয় সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান ও এস এম মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাদের তিনজনকেই বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে অবশ্য ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

সাইফুল আলম মাসুদ ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সহায়তায় ২০১৬ সালের মে মাস থেকে দীর্ঘদিন ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবদুস সামাদ লাবু আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এর পরপরই গত বছরের ১৯ আগস্ট আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে ঢোকানো হয় এস আলম পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কেডিএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুর রহমানের ছেলে সেলিম রহমানকে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে সেলিম রহমানকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

বিভিন্ন তদন্তে উঠে এসেছে, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্নভাবে ঋণের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। নামে-বেনামে এস আলম গ্রুপ এই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ হাতিয়ে নেয়। এছাড়া এস আলমের মালিকানাধীন অন্যান্য ব্যাংকে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করায় আটকে যায় আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের মূলধনও।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm