চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানি, দীর্ঘদিন ধরে ঘটছিল স্কুল চলাকালেই
অভিযুক্ত দুই শিক্ষক গ্রেপ্তার
১৫ দিন আগে গত ৯ জুনও চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাসটিকাস বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠতলায় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়। ওই স্কুলে ছাত্রীদের ওপর এর আগেও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে কেউ অভিযোগ দিতে সাহস পাননি। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে বিভিন্ন সময় ঘটনা জানানো হলেও তিনি উল্টো অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্রশ্রয় দিয়েছেন— এমন অভিযোগ উঠেছে। এদিকে যৌন হয়রানির সর্বশেষ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এবার আরও এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুন) চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান এলাকা থেকে সুরজিৎ পাল (৩৩) নামের ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
গত ৯ জুন চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটার সেন্ট স্কলাসটিকাস বালিকা বিদ্যালয়ে টিফিন বিরতির সময় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পরদিন দুই শিক্ষককে আসামি করে ওই ছাত্রীর মা বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন।
অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের মধ্যে বাকলিয়া রাহাত্তারপুলের বাসিন্দা রাকিব উদ্দিন (৩৫) চতুর্থ শ্রেণির বিজ্ঞান এবং জামালখানের বাসিন্দা সুরজিৎ পাল (৩৩) পঞ্চম শ্রেণির একই বিষয়ের শিক্ষক।
এর মধ্যে ১০ জুন মামলা দায়েরের পরপরই নগরীর বাকলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর ১৫ দিন পর পলাতক আরেক শিক্ষক সুরজিৎ পাল পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন।
থানায় দেওয়া অভিযোগে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, তার মেয়ে সেন্ট স্কলাসটিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ২০২৩ সাল থেকে তার মেয়ের ওপর স্কুলে যৌন নিপীড়ন চলছিল। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার হুমকিসহ নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে একসঙ্গে যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন এই দুই শিক্ষক।
এজাহারে বলা হয়, ভুক্তভোগী ছাত্রী স্কলাস্টিকা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। এ সুবাদে চতুর্থ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাস নেওয়া শিক্ষক মো. রকিব উদ্দিন ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া সুরজিত পালের সঙ্গে ২০২৩ সালে ওই ছাত্রীর পরিচয় হয়। এরপর থেকে ওই দুই শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলে কৌশলে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ তলার বাথরুমের পাশে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পর্শ করার চেষ্টা করে আসছিল। ওই ছাত্রী শিক্ষকদের কথামতো ওই স্থানে না গেলে তারা তাকে ক্লাসে বিভিন্ন ধরনের বকা-ঝকা করতো এবং পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন।
ছাত্রীর মা আরও উল্লেখ করেন, তার মেয়ে ওই শিক্ষকদের প্রস্তাবে রাজি না হলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো। এছাড়া দুই শিক্ষক ফোন করে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে কথাবার্তা বলতো। আমার মেয়ে ভয়ে ঘটনার বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করেনি।
সর্বশেষ গত ৯ জুন টিফিন বিরতির সময় ওই শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে বলে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে রোববার সকাল ৮টায় পাথরঘাটা সেন্ট স্কলাস্টিকা বালিকা বিদ্যালয়ে যায়। সকাল ১০টা ১০ মিনিটের সময় স্কুলের টিফিন বিরতি দেয়। তখন আমার মেয়ে বাথরুমে যাওয়ার সময় রকিব উদ্দিন ও সুরজিত পাল আমার মেয়েকে কৌশলে বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ তলার বাথরুমের পাশে নিয়ে যায়। তখন তারা আমার মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানী করে। তাদের এমন আচরণে আমার মেয়ে ভীত হয়ে চিৎকার করার চেষ্টা করলে দুই শিক্ষক বিষয়টি কাউকে না জানাতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয় এবং কৌশলে ঘটনাস্থল হতে চলে যায়। ওইদিন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের সময় স্কুল ছুটি শেষে বাসায় আসার পর থেকে আমার মেয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন তাকে কান্নাকাটি করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে পুরো ঘটনা আমাকে জানায়।’
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিল্পী সেলিন কস্তা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রশ্রয় দিয়েছেন— এমন অভিযোগও ওঠে।