চট্টগ্রামে সূর্যমুখী চাষে লাভের স্বপ্ন, ৩০ কাঠায় হাসছে হলুদ সূর্য

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক মো. শাহিন মিয়া। চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগরে ২৫ গন্ডা বা ৩০ কাঠা জমিতে তিনি সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই গাছে ফুল ধরেছে। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের দিকে শোভা ছড়াচ্ছে। চারিদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছে সে এক অপরূপ দৃশ্য। প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্যপিপাসু লোকজন সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত দেখতে আসছেন। অনেকেই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।

চট্টগ্রামে সূর্যমুখী চাষে লাভের স্বপ্ন, ৩০ কাঠায় হাসছে হলুদ সূর্য 1

জানা যায়, ঢাকার দোহার উপজেলার বাসিন্দা শাহিন মিয়া (৪৯) প্রায় ২৮ বছর আগে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় বসবাস শুরু করেন। ইছানগরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মালেক মাঝির বাড়িতে বসবাস করেন। তিন সন্তানের জনক তিনি। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে সন্তান স্কুলে পড়েন। পেশায় তিনি কৃষক। অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করেন। সরিষা, ধান, লাউ, বাংলা কদু, ধুন্দুলসহ (তরই) বিভিন্ন সবজি ও মাছ চাষ করেন। তাঁর খামারে রয়েছে ছাগলও।

s alam president – mobile

কৃষক শাহিন মিয়া জানান, গত দুমাস আগে তিনি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সূর্যমুখী ও সরিষা বীজ সংগ্রহ করেন। চাষের জন্য পেয়েছেন সারও। অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে তিনি এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়।

একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ করা যায়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়। এই চিন্তা থেকে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেন তিনি।

শুরুটা কিভাবে হয়েছে জানতে চাইলে শাহিন মিয়া বলেন ,‘আমি সবজি চাষ করি। কয়েক মাস আগে কর্ণফুলী উপজেলা কৃষি অফিসার আমাকে বললেন, এবারে সরিষা ও সূর্যমুখী বীজ আসল। চাষ করব কিনা। তখন আমি বললাম করব। কৃষি অফিসার জানালেন, আপনি তো আগে কখনও সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন নি। কিভাবে করবেন? আমি জানালাম চেষ্টা করলে অবশ্যই পারব। কারণ স্বপ্ন দেখতে সাহস লাগে।’

Yakub Group

শাহিন মিয়া বলেন, ‘তখন কৃষি অফিসারের সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রথমে কিছু জায়গায় সরিষা চাষ শুরু করি। কম লাভবান হই। পরে ২৫ গন্ডা জমি জুড়ে বেগুন ও মরিচের চারা রোপণ করার মতো সূর্যমুখী বীজ রোপণ করি। উপজেলা থেকে আমাকে ১০ হাজার পিস বীজ দিলেও আমি প্রথমে ৮ হাজার মতো বীজ রোপণ করি। একই সময়ে উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও বীজ নিয়েছেন। কিন্তু অবহেলা করে কেউ চাষ করেনি। আমি সাহস করে চাষ করেছি। কারণ আমার জমিদার খুব ভালো। তাঁর জমিজমা আমি দেখাশোনা করি। কোন টাকাপয়সা দিতে হয় না।’

ওই কৃষক আরও বললেন, ‘কৃষি অফিসার ওষুধ দিয়েছেন। ক্ষেতে তা ছিঁটানো হচ্ছে। সূর্যমুখী বীজ রোপণ করেছি প্রায় ৬০ দিন মতো হল। আরও ৩০ দিন সময় লাগবে বীজ পেকে ঘরে তুলতে। এ চাষটি করতে ২ জন শ্রমিকসহ আমার ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’

পরিপক্ক বীজগুলো কৃষক শাহিন মিয়া কোথায় বিক্রি করবেন বা কোনো পরিকল্পনা আগে থেকে রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিসার সাহেব জানালেন সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল বানানো হয়। এছাড়াও অনেকেই বলেছেন, এর বীজ হাঁস মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং ভালো দামে বিক্রি করা যাবে।’

কর্ণফুলীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশিক বড়ুয়া বলেন, ‘সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে সাত থেকে সাড়ে সাত মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। বিঘাপ্রতি কৃষকরা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবে। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে।’

কৃষি কর্মকর্তা জানান, ‘সূর্যমুখী একধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) হয়ে থাকে, ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর নামকরণ হয় সূর্যমুখী।’

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘সূর্যমুখী বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। উপকূলবর্তী এলাকায় শীতকালীন শস্য হিসেবে চাষ করা হয়।’

জানা গেছে, ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে। এছাড়াও সূর্যমুখীর তেল ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়— যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল থেকে ভাল এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!