চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদে সিটি কর্পোরেশনের নালা এবং হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ দেওয়া দুই কাঠা জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন কথিত এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে লাল কালি দিয়ে দখল করা জায়গা শনাক্ত করলেও এখনও তা পুনরুদ্ধার করা যায়নি। এছাড়া হাসপাতাল ও পোস্ট অফিসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া প্লট দখলের পাশাপাশি সঙ্গে লাগানো একটি নালার ওপরে ঢালাই দিয়ে দুই প্লটের মধ্যে করা হয়েছে সংযোগ স্থাপন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন অধিদপ্তরে অভিযোগ দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, ভূমিদস্যুর সঙ্গে গোপন আঁতাত রয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজনের। টাকা দিয়ে এসব অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব ভবন থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করছে ওই কথিত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কেফায়েত উল্লাহ শাহীন।
সরেজমিন দেখা গেছে, বায়েজিদ থানার ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের শেরশাহ কলোনির মিনারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের হাউজিংয়ের ২৭ নম্বর প্লটটি দাঁড়িয়ে আছে দুই কাঠা জায়গায়। পাশেই সিটি কর্পোরেশনের ২০ ফুট প্রস্থের নালা। কিন্তু সেই নালার প্রায় ১০ ফুট দখল করে গড়ে উঠেছে ২৭ নম্বর বহুতল ভবনটি। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নালা দখলের স্থান পর্যন্ত সেই ভবনের মধ্যই লাল কালি দিয়ে নালা দখলের স্থানও শনাক্ত করা হয়েছে।
সেই ভবনের পাশঘেঁষে ১০ ফুট প্রশস্থের একটি ছোট নালার সংযোগ রয়েছে বড় নালার সঙ্গে। কিন্তু সেই নালার উপরেও ভবনের একাংশ নির্মাণ করা হয়েছে। আবার সেই প্লটের গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটি বহুতল মার্কেট। সেই মার্কেটটিও গড়ে তোলা হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের খাল দখল করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাউজিং থেকে দুই কাঠা জায়গা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল ও পোস্ট অফিসের জন্য। সেই দুই কাঠা জায়গায় হাউজিংয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গড়ে তুলেছেন বহুতল মার্কেট।
এদিকে গত ১২ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশনের নালা দখল করে ভবন নির্মাণ, নালায় স্ল্যাব দেওয়া, নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ ও পানি চলাচলের ড্রেন দখল করার অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেরশাহ মিনার এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘এক সময়ের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন কেফায়েত উল্লাহ শাহীন। তিনি আবার এক পুলিশ বাদি মামলার আসামিও। কিন্তু ভূমি দখলে বেশ পটুও তিনি। মুখে মিষ্টি ভাষা সবসময় থাকলেও তার আড়ালে তিনি ভয়ংকর ভূমিখেকো। তাই এলাকায় প্রকাশ্য সরকারি নালা-জায়গা দখল করে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা চুপ।’
অভিযোগকারীদের একজন জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এক সময়ের স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা কেফায়েতের এতো ক্ষমতার জোর কোথায়? প্রকাশ্যে এমন ভূমিদস্যুতা করলেও কোনো সরকারি দপ্তরের কি চোখে পড়ে না?’
তিনি আরও বলেন, ‘কেফায়েত এলাকার জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ভবন নির্মাণের পাশাপাশি সরকারি নালা দখল করে বাড়ি অংশ বাড়িয়েছে। আবার তার বাড়ির ভেতরের অংশেও গায়ের জোরে ছোট নালা দখল করেছেন। আমরা তাকে স্থানীয়ভাবে বারবার বলার পরও কোনো সুরাহা না পেয়ে অবশেষে তিন সরকারি দপ্তরের অভিযোগ করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনও পর্যন্ত কোনো দপ্তর এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কেফায়েত উল্লাহ শাহীন বলেন, ‘আমার বিষয়ে সব অভিযোগই মিথ্যা। আমি নালা কিংবা অনুমোদন না নিয়ে ভবন নির্মাণ করিনি।’
বাড়ি নির্মাণের অনুমোদনপত্র দেখাতে পারবেন কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি কেন দেখাবো? সিডিএ থেকেই আপনাকে ফোন করবে আমার বিষয়ে বলার জন্য।’ একথা বলেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এই বিষয়ে নগর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি করে থাকে এমন অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এমন অভিযোগ অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট অফিসার জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নালা দখল করে ভবন নির্মাণ—এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত ইতোমধ্য শুরু হয়েছে। তদন্তের পরই অপরাধীর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরএন/ডিজে