ঘুষ নিয়ে সরকারি চাকরিতে উত্তীর্ণদের ‘ফিটনেস সনদ’ দিতে রাতের বেলা মেডিকেল টেস্টের নমুনা সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মচারী ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ কাজে তাদের সহযোগিতার করেছে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের দুজন কর্মচারী। মেডিকেল টেস্টে রিপোর্ট যাই আসুক, টাকার বিনিময়ে ‘ফিটনেস সার্টিকিকেট’ দেয় এই চক্র।
অভিযোগ পাওয়ার পর ওই হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি সব ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত প্রায় সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কনফারেন্স হলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে চূড়ান্ত উত্তীর্ণ ৭০ জনের এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে হলে সরকারি হাসপাতাল থেকে মেডিকেল টেস্ট বা শারীরিক পরীক্ষার নমুনা দিয়ে ফিটনেস সনদ নিতে হয়। সেই সনদসহ যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক থাকলে তবেই পাওয়া যায় চূড়ান্ত নিয়োগ। সম্প্রতি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে চূড়ান্ত উত্তীর্ণরা এই মেডিকেল টেস্ট করছেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে মেডিকেল টেস্ট করার নিয়ম থাকলেও নগরীর যে কোনো ল্যাবে টেস্ট করানো যাবে বলে জানানো হয় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে। সেসব টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালের দুই কর্মচারীর মাধ্যমে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রাতের বেলা ৭০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গোপনে শারীরিক পরীক্ষার নমুনা নেওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেটি বন্ধ করে দিয়েছি।’
বেসরকারি হাসপাতাল ম্যাক্সের ব্যাপারে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওই হাসপাতালের দু’জন লোককে চিহ্নিত করেছি। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করেছি।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করো হয়েছে—জানতে চাইলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শোকজের জবাব পেলে জানতে পারব, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কারা জড়িত রয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, ‘খবর পেয়ে সেখানে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়। পরে সিভিল সার্জন আমাদের জানিয়েছেন, তিনি এই ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেবেন। পরে পুলিশ সেখান থেকে চলে আসে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম জেলায় মোট ১ হাজার ২০২ জনকে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের জন্য চূড়ান্ত বাচাই করা হয়েছে। এদের মধ্যে যাদের শারীরিক পরীক্ষায় ফিটনেস সনদ, কাগজপত্র ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের সঠিক হবে, তারায় নিয়োগ পাবে।’
চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার ২০২ জনকে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক হিসেবে চূড়ান্ত করেছে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অধিদপ্তর। এদের মধ্যে যাদের শারীরিক ‘ফিটনেস’ পরীক্ষার সনদ থাকবে, কাগজপত্র ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের তথ্য সঠিক থাকবে, তাদের নিয়োগ পাওয়ার কথা রয়েছে।
ডিজে