ফ্যাক্টচেক/ চট্টগ্রামে সমন্বয়কের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির নালিশ, কলরেকর্ডে মিলছে প্রমাণ (ভিডিও)
প্রতিবাদ করায় ভাগ্নের ওপর হামলা
চট্টগ্রামে এক ‘সমন্বয়কে’র বিরুদ্ধে ‘সবকিছু হ্যান্ডেল’ করার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দফায় দফায় চাঁদা চেয়ে না পাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই সমন্বয়কের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক কর্মীকে ওই সমন্বয়ক ও তার সহযোগীরা মারধর করেন বলে জানা গেছে। চাঁদা দাবির দুটি কলরেকর্ডই সত্য বলে স্বীকার করেছেন জড়িত দুজন। এরপরও ডিপফেইক অডিও বা ভয়েস শনাক্ত করে— এমন আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, ইমন মোহাম্মদ নামের সেই ‘সমন্বয়ক’ সম্প্রতি নবগঠিত ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের’ কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক হিসেবে স্থান পেয়েছেন। এই সংগঠনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আরেক দল সমন্বয়কের হাতে ধরা পড়েন আবুল বশির নাঈম নামের এক যুবক। পরে পুলিশ এসে তাকে ডবলমুরিং থানায় নিয়ে যায়।

ইমন মোহাম্মদ চট্টগ্রামভিত্তিক সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। তার এক সহপাঠী বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইমন মূলত টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকে তার জীবনযাপন রাতারাতি পাল্টে যায়। জানা গেছে, ইমন বর্তমানে প্রাইভেট কারে চলাফেরা করেন। বিমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করেন। সমন্বয়কের তালিকায় না থেকেও তিনি সমন্বয়কের পরিচয়ে সুবিধা নেন— এমন অভিযোগও আছে।

বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এর আগে গত বছরের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ এবং সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ইমন মোহাম্মদ নামে কোনো সমন্বয়ক নেই।’

হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা দুটি কলরেকর্ডে শোনা যায়, ইমন মোহাম্মদ নিজেই এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ফোন করে হুমকি দিচ্ছেন। পরদিন তার সহযোগী রিফাতের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

গত রোববার (২ মার্চ) চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার চট্টেশ্বরী এলাকা থেকে ইটভাটা মালিক শামসুল ইসলামকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়। চকবাজার থানার পুলিশের সঙ্গে এ সময় ইমন নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ৪৫ বছর বয়সী শামসুল ইসলামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে। গত বছরের মার্চে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মনোনীত হন। এজন্য তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা বিপ্লব বড়ুয়ার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইমন প্রথম কল করে হুমকি দেন ব্যবসায়ী শামসুল ইসলামকে। এর পরদিন ঘনিষ্ঠ সহযোগী রিফাত আবার তাকে ফোন করে টাকার অংকটি (আট লাখ) জানান। সম্পর্কে রিফাত শামসুর ভাইপো হন। সামশুর স্বজনরা জানান, ফোনকলের পাঁচদিন আগে রিফাত ফোনে ইমনকে পরিচয় করিয়ে দেন সামশুল ইসলামের সঙ্গে। ওই সময় ‘লিয়াজোঁ’র জন্য বৈঠকে বসার জন্য সামশুকে অনুরোধ জানান ইমন। কিন্তু সামশু অসুস্থতার কারণে সেখানে যাননি।
ইমনের সঙ্গে সামশুলের কথোপকথন
১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ইমন ও রিফাতের সঙ্গে ব্যবসায়ী শামসুল ইসলামের দুটি কলরেকর্ডই সত্য বলে স্বীকার করেছেন জড়িত দুজনই। এরপরও ডিপফেইক অডিও বা ভয়েস শনাক্ত করে— এমন আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করেও চট্টগ্রাম প্রতিদিন কলরেকর্ডগুলো সত্যিকারের বলে প্রমাণ পেয়েছে।
ইমন: (আপনি)…মানে বাইরে আছেন, মানে দেদারসে সবকিছু করতেছেন, এটা জানতে চাচ্ছিলাম।
সামশুল: শোনেন অপরাধী যারা তাদের বিচার হবে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ন্যায়-নীতিতে যারা ছিল তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন হবে।
ইমন:শোনেন ২০১৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আমরা তো বলে আসছি এটা অবৈধ নির্বাচন এটা আমরা মানি না। এটা ভোটবিহীন সরকার, এটাকে আমরা একসেপ্ট করি না। তারপরও …..
সামশুল:আপনার বাড়ি কোথায় পড়ছে?
ইমন:আমার বাড়ি সাতকানিয়ার কাঞ্চনায়।
সামশুল:শোনেন… আমার এলাকায় তিনটা পার্টি আছে। কেউচিয়ায় বিএনপি-এলডিপি-জামাত তিনটা পার্টি আছে। তিন পার্টি থেকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার অবস্থানটা কী?
ইমন:শোনেন আমার অতো অবস্থান দরকার নেই। এখন কোনো রাজনৈতিক দল এখন আমরা খাচ্ছি না সমন্বয়করা। বুঝছেন? আপনি কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য— এটা তো লিগ্যাল? আপনি ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া থেকে শুরু করে.. সবকিছু লেনাদেনা…সবকিছুর ডকুমেন্টসগুলোই আমাদের হাতে আছে।
সামশুল:আমার সাথে তো কোনো লেনাদেনা ছিল না। এখন ডকুমেন্টস থাকলেও কী, না থাকলেও কী হবে?
ইমন:এখন আমি বলি যেই হোন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলাম। আপনার সেদিক থেকে লিয়াজোঁ করছেন। এখনও পর্যন্ত আপনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য হয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। বলেন…
সামশুল:আমরা তো কোনো অপরাধ করি নাই।
ইমন:আওয়ামী লীগ করাটাই অপরাধ।
সামশুল: নদভীর সাথে আমার ভেজাল। গোলাম মওলা রনির সাথে আমার দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল। এগুলো সব ওভারকাম করে আসতে হয়েছে। আপনাকে এতো কিছু বলার তো দরকার নেই। আপনার যেটা ইচ্ছা সেটা করেন।
ইমন:অসুবিধা নাই। আমি আজকে থানায় ইনফর্ম করে আসছি তো। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আপনার সম্পৃক্ততা যদি আমরা পাই, তাহলে তাদেরও কিন্তু আমরা জবাবদিহিতার আওতায় আনবো। আমার সাথে চৌধুরী (শাহজাহান চৌধুরী) সাহেবের সাথে কথা হয়, দেখি আমি জেনে নেবো। আমি সাতকানিয়ায় আজকে আসছি তো। আমি থানা থেকে এইমাত্র আসছি। ঠিক আছে?
সামশুল: আপনারা তো শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করতেছেন। শহীদদের স্পিরিট কী বুঝতে হবে। শহীদরা একটা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র চাইছে।
মামার পর ভাগ্নের ওপর হামলা
সোমবার (৩ মার্চ) রাতে মামা শামসুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর ভাগ্নে মামুনুর রশীদ জিদান চকবাজার থানায় খোঁজ নিতে যান। কিছুক্ষণ পর থানা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইমন ও তার সহযোগীরা তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় তিনি সেখান দৌঁড় দিলে ইমনসহ অন্যরা তাকে ধাওয়া করে। এর একপর্যায়ে চকবাজার মতি টাওয়ারের সামনে জিদানকে ধরে নির্মমভাবে মারধর করে। পরে চকবাজার থানার পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এলেও ইমন পুলিশের ওপর চাপ তৈরি করেন জিদানকেও গ্রেপ্তার করার জন্য।
ইমনের চাঁদাবাজির প্রমাণ রেখে দেওয়ায় তার ওপর হামলা চালানো হয়— এমন দাবি করে হামলার শিকার মামুনুর রশীদ জিদান বলেন, ‘সোমবার (৩ মার্চ) রাত ১টার দিকে ইমন মোহাম্মদ পুলিশ নিয়ে আমার মামার বাসায় হানা দেয়। পুলিশ আমার মামাকে থানায় নিয়ে যায়, আর ইমনের সহযোগীরা আমার পরিবারের নারী সদস্যদের সঙ্গে অবমাননাকর আচরণ করে—যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
জিদান বলেন, ‘এরপর আমি চকবাজার থানায় গেলে ইমন ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা চালায়। আমি জীবন বাঁচাতে দৌড় দিলে তারা ধাওয়া করে, মতি কমপ্লেক্সের সামনে আমাকে ধরে নির্মমভাবে মারধর করে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ইমন থানার ওপর চাপ সৃষ্টি করে আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য। সে অভিযোগ তোলে, আমি নাকি পুলিশের ওপর হামলা করেছি। চকবাজার থানার ওসির গায়ে হাত তোলার মতো গুরুতর অভিযোগ আনলেও পুলিশ তার চক্রান্তে পা দেয়নি। পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা থানায় গেলে পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেয়। এরপর আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিই।’
জিদান বলেন, ‘ইমনের দাবি, আমার মামা শামসুল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাই ব্যবসা করতে চাইলে তাকে ইমনকে চাঁদা দিতেই হবে। অথচ আমার মামার নামে কোনো মামলা ছিল না, তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকতো, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। ওনার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনি প্রক্রিয়ায় তার বিচার হোক। আমি কখনও কোনো অপরাধীর পক্ষে অবস্থান নেবো না। কিন্তু ইমন মোহাম্মদ কেন চাঁদা দাবি করলো?’
সমন্বয়ক পরিচয়ে ‘চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য’!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ জিদান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে সাতকানিয়া ও আশপাশের এলাকায় ইমন মোহাম্মদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। আমি এমন কিছু শুনেছিলাম, কিন্তু বিশ্বাস করতে চাইনি—যতক্ষণ না সে আমার নিজের মামার কাছেই চাঁদা দাবি করল!’
জিদান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় আমি চট্টগ্রামে সামনের সারিতে ছিলাম, যার প্রমাণ রয়েছে টিভি ফুটেজ, সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যে। আমি কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। কিন্তু আজ আমাকে এমন এক সত্য সামনে আনতে হচ্ছে, যা বলা আমার নিজের কাছেও লজ্জার। জুলাই আন্দোলনের চেতনা ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। এর নাম ভাঙিয়ে চলছে চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। আর এই অপরাধচক্রের একজন হয়ে উঠেছে আমারই এক সহযোদ্ধা—ইমন মোহাম্মদ।’
মধ্যস্থতাকারী রিফাতের স্বীকারোক্তি
চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নন— এমন দাবি করে ইমন মোহাম্মদের সহযোগী রিদোয়ান রিফাত ফেসবুকে দুটি পোস্ট দিয়ে বলেন, তিনি শুধু মধ্যস্থতাকারী বা বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ পোস্টে রিফাত স্বীকার করেন, ‘ইমন সরাসরি আমাকে বলে ৮ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করে।’
ফাঁস হওয়া কলরেকর্ডে শামসুলের উদ্দেশ্যে রিফাতকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি উনাকে (ইমনকে) জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি খোলামেলাভাবে বলেন আপনি কী চান বা কি করলে কী হবে? তখন সে (ইমন) বলে, তাহলে উনাকে আমার সাথে লিয়াজোঁ করতে বলেন।’ এ সময় বিষয়টি স্পষ্ট করে রিফাত শামসুলকে আরও বলেন, ‘ওরা আসলে কিছু চাচ্ছে। ডোনেশন চাচ্ছে।’ শামসুল জিজ্ঞেস করেন, ‘কতো চেয়েছে?’ রিফাত এ সময় বলেন, ‘সে (ইমন) বলেছে প্রথমে আট (লাখ) দিতে বলো। আমি সবকিছু হ্যান্ডেল করবো। কোনো সমস্যা হবে না।’
এদিকে ফোনের কলরেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর ইমনের সহযোগী রিদোয়ান রিফাত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বুধবার (৫ মার্চ) বিকেলে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইমন মোহাম্মদ সাতকানিয়ার ডেভিলদের তালিকা করে থানায় জমা দেয়। সেখানে শামসুল ইসলাম (আমার চাচাসম্পর্কীয় সহ ৭-৮ জনের) নাম ছিল। শামসুল ইসলাম বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং উনার বিরুদ্ধে যাতে কোন অ্যাকশন না নেয় তার জন্য আমাকে অনুরোধ করে এবং ইমন ভাইকে বলতে বলে। ইমন মোহাম্মদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক রাজনৈতিক সূত্রে, এটা তিনি জানেন। তিনি বলেন, ‘ভাইপো তোর সাথে তো ইমন মোহাম্মদের ভালো সম্পর্ক, তুই একটু উনার সাথে কথা বল।’ আমি কথা বলতে পারব না বললে উনি ইমোশনাল কথাবার্তা বলেন এবং একাধিকবার আমাকে কল দিলে আমি ইমন ভাইয়ের সাথে বসে কথা বলতে বলি। কিন্তু উনি (ইমন মোহাম্মদকে) টাকার অফার করতে বলে। শামসুল ইসলাম ও তার ভাগিনা ফাহিম আর ফারুক আমাকে কল দিয়ে বার বার বিরক্ত করলে তার কিছুদিন পর ইমন ভাইকে আবারও বলি। তখন উনি আমাকে যা বলতে বলেন আমি তাই বলি।’
রিদোয়ান রিফাত বলেন, ‘ফারুক আমাকে কল দিয়ে বার বার বিরক্ত করলে তার কিছুদিন পর ইমন ভাইকে আবারও বলি। তখন উনি আমাকে যা বলতে বলেন আমি তাই বলি, যা অডিওতে আছে। এইখানে আমার অপরাধ আমি মধ্যস্থতাকারী বা বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করেছি।’
এদিকে সর্বশেষ বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ‘শামশুল ইসলাম ও ইমনের বিষয়ে আমি রিদুয়ান রিফাতের স্টেটমেন্ট’ শিরোনামে ছাত্র অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার ফেসবুক গ্রুপে দেওয়া এক পোস্টে রিফাত বলেন, ‘ইমন মোহাম্মদ সাতকানিয়া উপজেলার ডেভিল হান্ট লিস্ট তৈরি করে থানায় প্রদান করে। যেহেতু শামসুল ইসলাম (চাচাতো চাচা) আগে থেকে লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় ইন শামসুল ইসলামের নাম দিলে তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করেন প্রথমে। পরবর্তীতে আমি ইমনের সাথে যোগাযোগ করলে সেই বিষয়ে ইমন সরাসরি আমাকে বলে ৮ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করে। আমি সেটা শামসুল ইসলামকে কলে অবগত করি। এখন আমার সাথে এই চাঁদাবাজির কোনো সম্পর্ক নাই, আমি জাস্ট মধ্যস্থতাকারী বা বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করেছি। যেহেতু তারা দুই জনই আমার পূর্বপরিচিত। এখন সবাই আমাকে ভুল বুঝতেছে। যেটার সাথে আমার এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কারোর কোনো সম্পর্ক নাই।’
পোস্টটি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি মুছে দেন রিফাত। তবে এর ভিডিও প্রতিলিপি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে।
ইমনের দাবি ‘সবই ষড়যন্ত্র’
অভিযোগের বিষয়ে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের’ কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ইমন মোহাম্মদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার ফোন কলে টাকার লেনদেনের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এটা মূলত আমার রাজনৈতিক সহযোগী রিফাত ও আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক মিলে ষড়যন্ত্র করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাজিয়েছে। তাছাড়া চাঁদা দাবির কলরেকর্ড তো তারা আগেই ফাঁস করতে পারতো, শামসুল হককে গ্রেপ্তারের পরে কেন করলো?’
দুই-তিন সপ্তাহ আগে ডেভিলের তালিকা সাতকানিয়া থানায় হস্তান্তর করেছিলেন— এমন কথা উল্লেখ করে ইমন বলেন, ‘সেখানে ৭-৮ জনের নামের মধ্যে শামসুল হকের নামও ছিল।’ ডেভিলের তালিকা করার দায়িত্ব তাকে কে দিয়েছে— এমন প্রশ্নে ইমন বলেন, ‘এটা আমরা নিজেদের উদ্যোগে দিয়েছি।’
দায় নিচ্ছেন না বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের সিনিয়র মূখ্য সংগঠক ফরহাদ বিন হাবিব ইমন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম উত্তরের মূখ্য সংগঠক শওকত আকবর পৃথক পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সম্প্রতি মোহাম্মদ ইমনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির যে অভিযোগ এসেছে তার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নাই এবং তার এই কাজের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্র নিন্দা জানায়। ভবিষ্যতে যদি কেউ এমন কাজের সাথে জড়িত থাকে তাকেও কঠিন ভাবে দমন করা হবে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আরিফ মঈনুদ্দিনের বক্তব্য চেয়ে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি এ বিষয়ে নিরুত্তর থাকেন।
সিপি