চট্টগ্রামে সমন্বয়করা দুই ভাগ, ছয় ঘটনায় দূরত্ব বাড়ছিল ৪ মাস ধরে
চট্টগ্রামের দ্বন্দ্বে হাওয়া আসছে ঢাকা থেকেও
কয়েক দফায় হামলা-পাল্টা হামলায় জড়ানোর পর চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত শীর্ষ সমন্বয়কদের অন্তর্দ্বন্দ্ব এই প্রথম প্রকাশ্য রূপ পেলো। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় এই বিভাজন স্পষ্ট হলো, যদিও নানা ঘটনায় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই সমন্বয়কদের মধ্যে একটু একটু করে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। তবে সেটি ছিল অনেকটাই আড়ালে। সমন্বয়কদের কারও কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও তদবিরবাণিজ্যে জড়িত থাকার খবরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত অনেকে ছিলেন ক্ষুব্ধও। সবমিলিয়ে আধিপত্য বিস্তার ও বঞ্চিতদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটলো সরাসরি বিভক্তির সংকেত বাজিয়ে।
৫ মাসের মাথায় সংঘর্ষ সরাসরি
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীতে কয়েক দফায় হামলা-পাল্টা হামলায় জড়ালো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত শীর্ষ সমন্বয়ক ও তাদের সমর্থকরা। সন্ধ্যায় ওয়াসা মোড়, এরপর রাতে জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ভেতরে-বাইরে সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। আব্দুল হান্নান মাসউদ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদসহ আরও কয়েকজনের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনার প্রতিবাদে রাসেলসহ তার সমর্থকরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডাকে। রাত পৌনে নয়টার সেই সংবাদ সম্মেলনে প্রতিপক্ষ সমন্বয়করা তাদের সমর্থকদের নিয়ে প্রথমে প্রেসক্লাবের ভেতরে হামলার চেষ্টা করে। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে প্রেসক্লাবের বাইরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ হামলা ও হেনস্তার ঘটনায় খান তালাত মাহমুদ রাফি ও আরেক সমন্বয়ক রিজাউর রহমানসহ চকবাজারভিত্তিক কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’কে দায়ী করেছেন। তবে রাফি ও রিজাউর রহমান নেতৃত্বাধীন অংশটি এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ চট্টগ্রামকে অপমান করেছেন। রিজাউর রহমান ও খান তালাত মাহমুদ রাফির বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’কে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ওই গ্যাং ব্যবহার করে নারী সমন্বয়কদের হেনস্তার নালিশও ওঠেছে ইতিপূর্বে।

ঢাকায়ও দুই ভাগ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঢাকাভিত্তিক দুটি অংশ চট্টগ্রামে দুটি গ্রুপকে সমর্থন দিচ্ছে। এর মধ্যে খান তালাত মাহমুদ রাফি ও রিজাউর রহমানের অংশটিকে সমর্থন দিচ্ছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদের সমর্থন পাচ্ছেন রাসেল আহমেদ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে একমাত্র রাসেলই স্থান পেয়েছেন।
সমন্বয়কদের দূরত্ব বাড়লো যেভাবে
গত নভেম্বরের শেষদিকে চট্টগ্রামের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হল খুলে দেওয়ার পর সিট বরাদ্দ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মীরা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা অভিযোগ করেন, ছাত্রশিবিরের একচেটিয়া সিট দখলের বিরুদ্ধে ছাত্রদলসহ অন্য সংগঠনগুলো অবস্থান নিলেও এ সময় খান তালাত মাহমুদ রাফি ছাত্রশিবিরের পক্ষ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেও সেখানে জড়ানোর চেষ্টা করে সমাবেশের ডাক দেন। কিন্তু আরেক সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ ওই সময় এর বিরোধিতা করে জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এ ধরনের কোনো কর্মসূচি দেয়নি। এ ঘটনায় তাদের দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় চট্টগ্রামের যেসব এলাকায় ছাত্র-জনতা জড়ো হন সেখানে সড়কবাতি বন্ধ রাখার অভিযোগে গত বছরের ১৪ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত করা হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ উপবিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ঝুলন কুমার দাশকে। পরে ছাত্রদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর ঝুলন কুমার দাশকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনে বদলি করা হয়। এর মধ্যেই গত ১৮ নভেম্বর সিটি কর্পোরেশনের ‘উন্নয়নের প্রয়োজনে’ ঝুলন দাশকে আবার চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে চিঠি লিখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। ঝুলন কুমার দাশসহ দুই প্রকৌশলীকে ফিরিয়ে আনতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়কের সুপারিশ রয়েছে বলেও তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান। কিন্তু এতে বেঁকে বসেন আরেক সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ। তার অনড় অবস্থানের কারণে গত ১৭ ডিসেম্বর ঝুলন দাশকে চাকরি থেকে পুরোপুরি অপসারণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনায়ও রাসেলের বিরুদ্ধে তার প্রতিপক্ষ সমন্বয়করা ক্ষুব্ধ ছিলেন।

সম্প্রতি চট্টগ্রামে মেলার আয়োজন করতে যাওয়া এক নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রিজাউর রহমানের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ৬ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার ঝড় ওঠে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনেও এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর নেপথ্যেও রাসেল আহমেদের যোগসাজশ রয়েছে— বিভিন্ন মহলে রিজাউর ও রাফি এমন অভিযোগ তোলেন বলে জানা গেছে।
একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নারী সমন্বয়কদের হয়রানি করছেন শীর্ষস্থানীয় পুরুষ সমন্বয়করা। কোনো বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করলেই তাদের বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং লেলিয়ে দেওয়া, অনলাইনে হয়রানিসহ অন্যান্য সমন্বয়কদের দিয়ে অপদস্ত করা হয়। গত নভেম্বরে এমন সব অভিযোগ তোলেন নারী সমন্বয়করা। তারা এজন্য সরাসরি দায়ী করেন খান তালাত মাহমুদ রাফি ও রিজাউর রহমানকে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের একটি অংশ কেন্দ্রে অভিযোগ জমা দেন। এসব অভিযোগের বিষয় মীমাংসা করতে চট্টগ্রামের সকল সমন্বয়ককে কেন্দ্রীয় কমিটি ঢাকায় ডাকলেও চট্টগ্রাম থেকে কাউকে যোগ দিতে মানা করেন রাফি— এমন কথা জানান কয়েকজন সমন্বয়ক। শেষ পর্যন্ত সভাটি আর হয়নি। এই ঘটনায় আরেক সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ হয়রানির শিকার নারী সমন্বয়কদের পক্ষে অবস্থান নেন। এতে ক্ষুব্ধ হন রাফি-রিজাউর।
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকে বিভিন্ন সময় অভিযোগ তোলেন, রাফি ও রিজাউর চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা ধরনের তদবিরে জড়িত। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রুহুল আমীন তদরফারের প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেককে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের চুক্তি নবায়নেও তাদের হাত ছিল। নতুন ব্রিজ থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত বালির ব্যবসা বণ্টন থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদাবাজির সঙ্গেও এই সিন্ডিকেট জড়িত। তবে রাফি ও রিজাউর দুজনেই বিভিন্ন সময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে একমাত্র স্থান পান রাসেল আহমেদ। তাতে রাফিকে না রাখায় তার অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হন।
শনিবার রাতে যা ঘটেছিল
শনিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম নগরীর বিপ্লব উদ্যান এলাকায় জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের পক্ষে পথসভা, জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এবং সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ। পরে তারা পথসভায়ও বক্তব্য রাখেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পথসভা শেষে সাড়ে চারটার দিকে ওয়াসা মোড়ের একটি ভবনের পঞ্চম তলায় একটি অফিসে যান মাসুদ-রাসেলসহ তাদের কয়েকজন সমর্থক। এর কিছুক্ষণ পর রিজাউরের নেতৃত্বে ডট গ্যাংয়ের ১০-১২ জনের একটি দল ওই অফিসে যায়। জোর করে সেই অফিসে ঢুকে সহ-সমন্বয়ক রিজাউর কেন্দ্রীয় নেতা মাসউদের কাছে কৈফিয়ত চেয়ে বলেন, ‘আজকের প্রোগ্রাম সম্পর্কে আমাদের জানান নাই কেন?’ জবাবে মাসউদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের সমন্বয়ক দুজনকে জানিয়েছি। আপনাকে কেন জানাবো? হু আর ইউ?’
এ সময় রিজাউরসহ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ডট গ্যাংয়ের সদস্যরা। এর একপর্যায়ে তারা ওই অফিসের চেয়ার ভাঙচুর করে। রাসেল সমর্থকদের কারও কারও সঙ্গে হাতাহাতিও হয়। এর একপর্যায়ে রিজাউরের নেতৃত্বাধীন ‘ডট গ্যাং’ সদস্যরা আব্দুল হান্নান মাসুদ, মাহিন সরকার, রিফাত রশীদ ও রাসেল আহমেদকে প্রায় এক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। রিজাউর এ সময় ফোন করে একদল কিশোরকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
পরে খবর পেয়ে গণআন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক সাগর তার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে আব্দুল হান্নান মাসুদ ও রাসেল আহমেদকে বের করে আনেন। ওই সময় তারা এ ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। এর পরপরই রাসেলসহ তার অনুসারীরা মিছিল নিয়ে জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের দিকে আসেন।
রাত পৌন নয়টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সহ-সমন্বয়ক আরিফ মঈনুদ্দিন ও ওমর ফারুক সাগর। এরপর রাসেল আহমেদ বক্তব্য শুরুর পরপরই দলবল নিয়ে সেখানে ঢোকেন খান তালাত মাহমুদ রাফি ও রিজাউর রহমান। ডট গ্যাংয়ের সদস্যদের কয়েকজন এ সময় তাদের সঙ্গে থাকলেও বেশিরভাগ সদস্যই প্রেসক্লাবের নিচে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে রাসেলের পাশে গিয়ে বসেন রাফি। তবে রিজাউর চেয়ারে বসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
রাফিকে দেখেই ‘চাঁদাবাজ’ স্লোগান
ওপরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের হলরুমে ওই সময় রাফি ও রিজাউরের সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেয়। তাদের সমর্থকরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। অন্যদিকে খান তালাত মাহমুদ রাফিকে দেখে ‘চাঁদাবাজ’ বলে স্লোগান দেন অনেকে। এমন স্লোগানে কয়েকজন তেড়েও যান রাসেল ও অন্য সমন্বয়কদের দিকে। এ সময় সেখানে দুই পক্ষের সমর্থকরা হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন। এর একপর্যায়ে হলের মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হলে সংবাদ সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়।
জুলাইয়ের আন্দোলনে আহত হয়েছেন— এমন দাবি করে স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে আসা একজন এ সময় রাফি ও রিজাউরের সঙ্গে অবস্থান নেন। কিন্তু রাসেলের অনুসারীরা দাবি করেন, ওই ছেলে আহত হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে তারা গত ৫ আগস্ট বিজয়মিছিলের একটি ছবি দেখিয়ে দাবি করেন, ‘স্ক্র্যাচ ছাড়াই ওই ছেলে সেদিন মিছিলে অংশ নেয়। তাহলে তিনি আহত হলেন কখন?’ তারা ওই ছেলের মেডিকেল পরীক্ষা করানোরও দাবি জানান।
রাত ১০টার দিকে প্রথমে রাসেল ও তার অনুসারীরা এবং এরপর রাফি-রিজাউরের অনুসারীরা প্রেসক্লাবের নিচে এসে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সময় তারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকে। প্রায় ৪০ মিনিট এভাবে চলার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিলে কোতোয়ালী থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ প্রেসক্লাবের নিচে অবস্থান নেয়। এরপর রাসেল তার অনুসারীদের নিয়ে সেখান থেকে চলে যান। তবে রাফি ও রিজাউরের সমর্থকরা রাত ১১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
আবার আলোচনায় ‘ডট গ্যাং’
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা অভিযোগ করেন, তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘শনিবার বিকেলে তারা ২ নম্বর গেইট থেকে তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি শেষে ওয়াসার আরডিএস অফিসে বসেন। সেখানে ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন সমন্বয়কও ছিলেন। তারা জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে একটা শর্ট ফিল্ম তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য আসেন। কিন্তু আলোচনা শুরু না হতেই আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের সহযোগী সাদিক নামে এক কিশোর গ্যাং সদস্য সেখানে গিয়ে হাজির হয়। সাম্প্রতিক সময়ে যে সমন্বয়কের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে, কিশোর ডট গ্যাংয়ের সেই লিডার রিজাউর রহমানও তার সাথে ছিল। তাদের সাথে থাকা অনান্য সমন্বয়কারীরা আব্দুল হান্নান মাসউদ, ওমর ফারুক, তানভীর শরীফের ওপর হামলা করে। সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখে। হামলাকারীদের হাতে ছুরি ছিল। রড ছিল। তারা এসব নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। পুলিশের প্রতি আমাদের অনুরোধ ভিডিও ফুটেজ দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
হামলার শিকার চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক তানভীর শরিফ বলেন, ‘আমি জুলাইয়ের আন্দোলনে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা পিজি হাসপাতালে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলাম। খবর আসে রাসেলকে, মাসুদকে অবরুদ্ধ করে রেখে হামলা করছে। আমাকে ফোন দেয়। আমি যাওয়ার পর আমাকে টার্গেট করে আন্দোলনের সময় শরীরের যে অংশে গুলি লেগেছিল, ঠিক সেখানেই আজ আঘাত করা হয়েছে। এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
রাফি-রিজাউরপন্থীদের হামলায় হামলায় তানভীর শরীফ, আরিফ মঈনুদ্দিন, ওমর ফারুক সাগর, নওশাদ, নাসির উদ্দিন, মাহমুদ আলম, শফিকুল ইসলাম, খলিল, ইফতি, রেজোয়ানসহ আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এই হামলায় জড়িত ছিল রিজাউর রহমানের নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’।
সিপি