চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নির্বাচন ঘিরে এবার প্রার্থীর ওপর প্রকাশ্যে হামলার ঘটেছে। আগামী ৮ জুন শিল্পকলার ভোটগ্রহণের আগে হাইকোর্টের রায়ে ১১১ জনের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার পরপরই এই হামলার ঘটনা ঘটলো। শিল্পকলার ভোট ঘিরে এমন অভাবনীয় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৫ জুন) রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় দৈনিক আজাদী অফিসের সামনেই সংঘবদ্ধ একটি চক্র সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেনের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে অপহরণ করার চেষ্টা করে। সাজ্জাত হোসেন জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, হাইকোর্টের রায়ে ১১১ জনের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে একটি পক্ষ তার ওপর হামলা চালিয়েছে। হাইকোর্টের রিট আবেদনের বিষয়টি সমন্বয় করছিলেন সাজ্জাত।
এ ঘটনায় রাতেই চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় দুজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন সাজ্জাত হোসেন। ঘটনায় জড়িত যে দুজনকে তিনি শনাক্ত করেছেন, তারা হলেন— বাকলিয়ার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৫) ওরফে ঘি মামুন ও ষোলশহরের বাসিন্দা আবু সায়েম (৩০)। তাদের বিস্তারিত পরিচয় এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাজ্জাত বলেন, ‘রাত আটটার দিকে আমি আজাদী অফিসের নিচে একজন ভোটারকে পেয়ে আলাপ করছিলাম। হঠাৎ করে ১০-১২ জন আমাকে গালাগাল করে তেড়ে আসে। তেড়ে এসে আমার ওপর হামলা করে। আজাদীর কয়েকজন স্টাফ আমাকে টেনে তাদের অফিসে দোতলায় তুলে ফেলেন। পুরো ঘটনাটা আজাদীর সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা আছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নির্বাচনের প্রচারণার কাজে নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় অবস্থান করছিলেন যুগ্ম সম্পাদক পদপ্রার্থী সাজ্জাত হোসেন। এর আধঘন্টা পর দৈনিক আজাদী অফিসের নিচে অবস্থানকালে জনৈক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আবু সায়েমসহ ১০ থেকে ১২ জন অজ্ঞাতনামা যুবক এসে সাজ্জাতকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক যুবক হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই শিল্পকলা একাডেমির বিষয়ে আদালতে রিট করছিস কেন? তোকে নির্বাচন করতে কে বলছে?’ সাজ্জাত হোসেন এ সময় তাকে সংযত ভাষায় কথা বলার জন্য অনুরোধ জানালে তার সঙ্গে থাকা সায়েমসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এর এক পর্যায়ে সাজ্জাতের পরনের পাঞ্জাবিটি ছিঁড়ে ফেলে তাকে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে সংঘবদ্ধ চক্রটি। পরে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে দৈনিক আজাদী অফিসের ভেতরে নিয়ে যায়। ওই সময়ও অজ্ঞাতনামা যুবকরা সাজ্জাতকে হুমকি দিতে থাকে— শিল্পকলা একাডেমীতে তাকে দেখলে প্রাণে মেরে লাশ গুম করে ফেলবে।
পরবর্তীতে হামলা ও অপহরণ চেষ্টার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত আবু সায়েম (৩০) তার ফেসবুক আইডিতে সাজ্জাতকে মারধরের ছবি পোস্ট করে লিখেন— ‘মাইর হইছে আবার পাইলে আবার চলবে।’
সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘আমি শিল্পকলা একাডেমি পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে যুগ্ম সম্পাদক পদপ্রার্থী। এই নির্বাচন উপলক্ষে কয়েকদিন বিভিন্ন ভোটারের কাছে যাচ্ছি। এই নির্বাচনে ১১১ জনের নাম ভোটার তালিকায় আসে নাই। এর মধ্যে ৫১ জন হাইকোর্টে রিট করেছেন। তাদের পক্ষ হয়ে পুরো বিষয়টি আমি মনিটরিং করি। আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগসহ বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকায়ও আনার জন্য চেষ্টা করি। গত পরশু হাইকোর্ট বাদ পড়া সকলকে ভোটাধিকার প্রয়োগের নির্দেশ দেন। সেটি আজকের অনেক পত্রিকায় সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। এতে একটা পক্ষ আমার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়। আমি শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় ছিলাম। যারা ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন তারা যে শুধু আমাকে ভোট দেবেন এমনটা না। যোগ্য মনে করলে আমাকে দেবে, নয়তো অন্য কাউকে দেবে। যারা মনে করছে নতুন করে ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া ১১১ জনের ভোট তাদের পক্ষে যাবে না, তারাই এই ঘটনাটি ঘটাতে পারে।’