মালামাল সরবরাহ না করে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় রেলের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ঠিকাদারের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় এ মামলা করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রাক্কলন ব্যয়ের ৩১ শতাংশ কমে মালামাল সরবরাহের কথা বললেও তা মালামাল সরবরাহ না করে ওই টাকা তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর দপ্তরে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আহসানুল কবীর পলাশ বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন—রেলওয়ে পাহাড়তলী দপ্তরের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহমেদ (৫৫), একই দপ্তরের সাবেক অতিঃ প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পাহাড়তলী দপ্তরের উপ-সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল আমিন (৪৮), পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস (৪৮) এবং চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির স্বত্বাধিকারী এএসএম ইকবাল মোর্শেদ (৪৬)।
মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাহিদাপত্র অনুযায়ী বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) প্রস্তুত করা হয়। এজন্য সিঙ্গেল এপিপি’র মাধ্যমে অধিকাংশ মালামাল কেনা হয়। পাহাড়তলী দপ্তরের এপিপি অনুমোদন করেন এডিজি (রোলিং স্টোক)। তবে ওই দপ্তরের পাঁচ লাখ টাকার নিচের এপিপি অনুমোদন করেন দপ্তরের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক নিজেই।
২০২১ সালের ২৩ মার্চ পাহাড়তলী ডিপো হতে ১৪৬ দশমিক ৯২৭ টনের কাঁচা লোহা ক্রয়ের চাহিদা প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানো হয়। ওই অর্থবছরে বাজেট স্বল্পতার কারণে ১৪৬ দশমিক ৯২৭ টনের পরিবর্তে ৮৫ মেট্রিকটন ক্রয় করা যেতে পারে বলে ক্রয় পরিকল্পনার অনুচ্ছেদ ৫.১-এ উল্লেখ করা হয়। সেই অনুযায়ী প্রাক্বলিত ব্যয় নির্ধারণী কমিটি বাজার যাচাই করে প্রতি টন কাঁচা লোহার দাম ২ লাখ ৩৪ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করে। ওই মালামাল ক্রয়ের আনুমানিক সরকারি খরচ অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর এবং প্রতিবেদন দাখিল করা হয় একইবছরের ২৭ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ মালামাল ক্রয়ের চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয় ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট।
মামলার বিবরণীতে আরও জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির প্রাক্কলন ব্যয়ের ৩১ শতাংশ কমে মালামাল সরবরাহের কথা বলেও মালামাল সরবরাহ না করে বিল নিয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠেছে আসে। ক্রয়ের প্রাক্বলন কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বাজার মূল্য ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ৬০০ টাকা। টেন্ডার কমিটির সদস্যরা ঠিকাদারের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে চাহিদাকৃত ১৪৬ দশমিক ৯২৭ টনের পরিবর্তে ৮৫ টন সরবরাহ দেখানো হয়। বাকি মালামাল সরবরাহ না করে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত জানান, মালামাল সরবরাহ না করে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অপরাধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তকালে এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে।
এমএ/ডিজে