চট্টগ্রামে যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের নিয়ে ‘তদন্তে’ যাবে কেন্দ্র, পুরো তালিকা প্রকাশ হবে না

২০০ সিভি গেছে চট্টগ্রাম নগর ও উত্তর-দক্ষিণ জেলা থেকে

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চট্টগ্রাম জেলার তিন শাখার শীর্ষ দুই পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি জমা দেওয়ার ৪ দিন পরেও এই তিন কমিটির নেতৃত্ব দিতে চাওয়া নেতাদের নামের তালিকা প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, যুবলীগের নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়াকে ‘বিতর্কমুক্ত’ রাখতে সিভি দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত বেধে দিয়েছিল, ওইসব শর্ত পালন না করেই অনেকে সিভি জমা দিয়েছেন— এমন সন্দেহ থেকে সিভি জমা দেওয়া নেতাদের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না।

তদন্ত ও যাচাইবাছাই করে পরবর্তীতে এই তালিকা প্রকাশ করে সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে যুবলীগের এই তিন কমিটির নেতা নির্বাচন করার কথাও জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

জানা গেছে, সম্মেলন আয়োজন করার বিষয়ে এর মধ্যেই আলোচনা করছে দলটির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। প্রাথমিকভাবে ২৭, ২৮, ২৯ মে— এই ৩ দিন ৩ ইউনিটের সম্মেলনের কথা আলোচনা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। তবে এই বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সম্মেলনে এই দফায় সিভি জমা দেওয়া নেতাদের মধ্য থেকেই নেতা নির্বাচন করা হবে।

গত ২ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর, দক্ষিণ জেলা ও উত্তর জেলায় পদপ্রত্যাশী নেতাদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় যুবলীগ। ৩ দিনে এই ৩ জেলার শীর্ষ দুই পদের জন্য প্রায় ২০০ জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে বলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে।

এর মধ্যে ১০৮টি সিভি জমা পড়েছে শুধুমাত্র মহানগর যুবলীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য। নগরের সভাপতি পদে ৩৫ আর সাধারণ সম্পাদক পদে ৭৩ জন সিভি জমা দিয়েছেন। বাকি দুই ইউনিটের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় সভাপতি পদে ১৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯টি সিভি জমা পড়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় সভাপতি পদে ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন সিভি জমা দিয়েছেন।

তবে এর পর ৪ দিন পার হয়ে গেলেও সিভি জমা দেওয়া নেতাদের তালিকা প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে বিতর্কমুক্ত ও গ্রহনযোগ্য করতে আমরা সিভি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করে দিয়েছি। সেগুলো পুরোপুরো মেনটেইন করা গেছে কিনা সেটা নিয়ে আমাদের শীর্ষ নেতারা কনভিন্স নন। তাই সিভিগুলো যাচাই বাছাই করে যেগুলো পুরোপুরি ক্রাইটেরিয়া মেনে জমা দেওয়া হয়েছে সেগুলো বের করে তবেই এই তালিকা প্রকাশ করা হবে। আমরা কোনো বিতর্কের সুযোগ দিতে চাইছি না।’

কারা কারা যুবলীগের শীর্ষ পদের জন্য সিভি দিতে পারবেন— এই বিষয়ে কী ধরনের শর্ত ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে তিন ইউনিটের জন্য সিভি জমা নেওয়া হয়েছে সে ইউনিটগুলোর বর্তমান কমিটির যেকোন নেতার সিভি জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল। থানা ও উপজেলা যুবলীগের কমিটিগুলোর শীর্ষ পদের নেতারা ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা, জেলা ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব পালন করা নেতাদেরও সিভি জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল।’

ঢাকায় সিভি জমা দেওয়া চট্টগ্রামের এক নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসব শর্তের কারণে অনেকেই সিভি জমা না দিয়ে ফিরে এসেছেন। আবার অনেকেই আছেন যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিভি জমা দিয়েছেন। অর্থাৎ দেখা গেছে কেউ একজন একটা থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন তথ্য দিয়ে সিভি জমা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি আদতে তা কখনোই ছিলেন না। অনেকেই এমন মিথ্যা পদপদবি বসিয়ে সিভি জমা দিয়েছেন। তবে দপ্তর সেল এই বিষয় নিশ্চিতে বেশ তৎপর ছিল। তবু এটা নিশ্চিত করা বেশ কঠিন। কারণ অনেকেই আছে যারা রাজনৈতিকভাবে বেশ শক্ত অবস্থানে ছিলেন, কিন্তু যেসব ক্রাইটেরিয়া দেওয়া হয়েছে সেগুলো পূরণ করতে পারছেন না।’

এই বিষয়ে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিভিগুলো নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো যে, যাতে কোন বিপথগামী যুবক আমাদের যুবলীগে আসতে না পারে। আমরা সেটা যাচাই বাছাই করব তদন্তে পাঠাবো। তারপর আমরা সম্মেলনে যাবো। সম্মেলনের পর আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। সেকেন্ড অধিবেশনে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো কোন্ প্রক্রিয়ায় আমরা নেতা নির্বাচন করবো।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!